স্থানীয় সময় গত ২র ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েসনের উদ্যোগে সিডনির ল্যাকেম্বাস্থ ধানসিঁড়ি ফাংসন সেন্টারে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করেন কার্যকরী পরিষদের অন্যতম আকিদুল ইসলামকে। সংগঠনের সভাপতি মোঃ আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় মুখ্য আলোচক ও প্রধান অতিথি ছিলেন; সাবেক সংসদ সদস্য, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউসন বাংলাদেশ এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। কোরআন তেলোয়াত করেন আওয়ামিলীগ অস্ট্রেলিয়ার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাবিব হাসান টুলু এবং প্রধান অতিথির প্রস্তাবনায় হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ স্রীমদ্ভগবত গীতা থেকে পাঠ করে শোনান সংগঠনের উপদেষ্টা ও সংবিধান প্রনেতা ড. রতন কুন্ডু। এরপর অনুষ্ঠানে সবাই সমস্বরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ভ্রমনকালে সংগঠনের একজন সম্মানিত সদস্য জনাব সাদ্দাম হোসেনের অকাল মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। হাবিব হাসান টুলু ভাষা আন্দোলনে, স্বাধীনতা যুদ্ধে, ১৫ ই আগষ্টে ও একুশে আগষ্টে নিহতদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন। সভাপতির স্বাগত ভাষনের পর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আহমেদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
আকিদুল ইসলামের স্বভাবজাত আবেগময় কাব্যিক উপস্থাপনায় এই মহতী অনুষ্ঠানটি আলোকিত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েসনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, মিডিয়া কমুনিকেশন সম্পাদক জিয়াউল কবির জিয়ন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাজী মো: দেলোয়ার হোসেন, সংগঠনের অন্যতম সদস্য সদস্য বেলাল হোসেন ঢালী ও এসএম দিদার হোসেন।
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবি ড. মোঃ সিরাজুল হক, উপদেষ্টা ড. রতন কুন্ড ও বাংলাদেশ থেকে আগত জনাব বাহাউদ্দিন নাছিমের পতœী ডাঃ সুলতানা শামীমা চৌধুরী। এছাড়া এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের অধ্যক্ষ মিসেস মিলি ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম, মাতৃভাষা সংরক্ষণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সিডনির এসফিল্ড পার্কে বহির্বশ্বে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধের রূপকার শ্রী নির্মল পাল, কমিউনিটির নেতা একেএম ফজলুল হক শফিক, নির্মাল্য তালুকদার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিকদার , সাংগঠনিক সম্পাদক দিদার হোসেন , সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জাকারিয়া আল মামুন স্বপন, হাজি দেলোয়ার প্রমুখ।
জনাব আকিদুল ইসলাম মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও ভাষা আন্দোলন কিভাবে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে পরিনত হয়েছিলো তার পটভূমি বর্ণনা করেন। বিশেষ অতিথি রতন কুন্ডু এই অস্ট্রেলিয়ায় কিভাবে শ্বেতাঙ্গরা আদিভাষীদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছিল এবং দুশো বছর পরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্ণবুল মহান সংসদে অনুশোচনার কান্নায় প্লাবিত হয়ে রাস্ট্রীয় ভাবে তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো তার বর্ণনা করেন। তেমনি বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আদিবাসীদের ভাষা সংরক্ষনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করে কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন ও এ যাবত আদিবাসীদের হারিয়ে যাওয়া পনেরোটি ভাষার বর্ণমালা উদ্ধারে সমর্থ হয়েছেন। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন “জয় বাংলা” কোন দলের স্লোগান নয়। এটা আপামর বাঙালীর স্লোগান। আমাদের স্বাধীনতার স্বারক স্লোগান। এই স্লোগানে আমরা বারবার উজ্জীবিত হই। বিশেষ অতিথির ভাষনে ড. সিরাজুল হক ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদান, একটি সাম্প্রদায়িক দেশকে অসাম্প্রদায়িক মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে সমস্ত জাতিকে একত্র করে কিভাবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছেন তার উপর আলোকপাত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই এরকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েসনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য সবাইকে উদাত্ত্ব আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করেছেন তার বিস্তারিত বর্ণনা করেন। তিনি তাঁর আরেকটি স্বপ্ন- স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাফেলায় সবাইকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
মত বিনিময় পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব মেহেদী হাসান সহ অনেক অতিথি সমকালীন বিষয়াবলী নিয়ে প্রধান অতিথিকে প্রশ্ন করেন। তিনি উদাহরণ সহ সবার প্রশ্নের উত্তর দেন। অভ্যাগতদের কাছ থেকে আসা আব্দার, উপদেশ ও প্রতিকার নোট করে নিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে বিষয়গুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন। সবশেষে সভাপতি আব্দুল মতিন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই মহতী সভার কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষনা করেন। আগত অতিথিদের সবাইকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করা হয়।