চট্টগ্রামের কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক, জেলায় প্রবেশের প্রধান সড়কটি একসময় অপ্রসস্ত, কোথাও পাহাড়ের উপর উঁচু-নিচু সড়ক পথ, আবার কোথাও ছোট ছোট টানিং থাকার কারনে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ও আহত হওয়ার খবরে আতকে উঠতো স্থানীয়সহ জেলায় ভ্রমনে আসা পর্যটকরা। গত দেড় মাস আগে সেই সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হওয়ার পর একটি দূর্ঘটনারও খবর পাওয়া যায়নি।
সেনা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে , ২৬৬.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে বান্দরবান-কেরানীহাট জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করেছেন সেনাবাহিনীর ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। আর এর মাধ্যমে জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হলো পর্যটন নগরী বান্দরবান।
বান্দরবানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কটি। পর্যটন শহর হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী বিদেশী পর্যটকসহ স্থানীয়রা যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন সড়কটি, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলার একমাত্র সড়কটি আঁকা বাঁকা ঢালু ও সরু হওয়ায় প্রায়ই ঘটত সড়ক দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, সড়কের বিভিন্ন স্থান নিচু হওয়ার কারনে বর্ষা মৌসুমে কয়েকদিন বৃষ্টি হলে তলিয়ে যেত সড়কটির বাসস্টেশন, বাজালিয়াসহ বিভিন্ন অংশ, আর এর ফলে সারাদেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে চরম দূর্ভোগে পড়ত পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
আরো জানা যায় , এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে সড়কটির যথাযথ মান, প্রশস্তকরন ও উন্নতীকরণের করে জাতীয় মহাসড়কে রুপান্তর করতে কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করায় এখন লাঘব হবে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, উন্নত হবে স্থানীয়দের জীবনমান, হ্রাস পাবে সড়ক দূর্ঘটনা।
বান্দরবানের বাসস্টেশন এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর বান্দরবান-কেরানীহাট সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, আর নতুন এই সড়ক খুব সুন্দর ও প্রশস্ত হওয়ায় দূর্ঘটনা কমে গেছেন।
বান্দরবান- চট্টগ্রাম সড়কের বাস চালক মো.জসীম জানান, বান্দরবান সড়কে এখন বাস চালাতে আগের চেয়ে অধিক সহজ ,আগের চেয়ে সড়কের মান ভালো হওয়ায় এবং রোড ডিভাইডার থাকার কারনে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।
সুত্রে জানা গেছে , ২০১৮ সালের ২৩অক্টোবর কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর অর্পিত হয়েছে। সেনা বাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই (১৫ ডিসেম্বর ২০২২) সফলভাবে সম্পন্ন করেন।
প্রকল্পের আওতায় ২১টি ব্রীজ, ১৫টি কালভার্ট, ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিস্কাষন অবকাঠামো তৈরিসহ সড়ক প্রশস্তকরনসহ কাজের গুনগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হয়েছেন বলে জানান প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্প এর প্রকল্প কর্মকর্তা (২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) মেজর মো: শাহ সাদমান রহমান বলেন, ২৬৬.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন।
তিনি আরো বলেন, সড়কটির গড় প্রশস্থতা পূর্বে মাত্র ৫.৫৮ মিটার ছিল, এছাড়া বিভিন্ন যানবাহন এবং পণ্যবাহী বাহনের চাপ অনুযায়ী সড়কটির প্রশস্ততা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রশস্থতা কম থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে উভয়মুখী যানবাহন চলাচল করতে হতো, ফলে সড়কটিতে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটতো। সড়ক প্রশস্ত করনসহ কাজের গুনগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হয়েছে।
এদিকে সড়ক বিভাগ বান্দরবান এর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী জানান, সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এর অক্লান্ত পরিশ্রমে সড়কটির কাজ শেষ হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে সড়কটির উদ্বোধন করবেন। সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হওয়ায় ফলে এখন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে পর্যটন শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে।