নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সিঙ্গাপুর প্রবাসী নুরুল আমিনকে বরিশালের মুলাদী উপজেলায় এনে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় আসামি তানিম মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের খোরশেদ মীরের ছেলে।হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার চরবক্তাবলী উপজেলার লক্ষ্মীনগর গ্রামের পিয়ার আলী ফকিরের ছেলে। অপর আসামি হলেন নুরুলের-ই চাচা হানিফ ফকিরের ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী কামরুল ইসলাম। তানিম সম্পর্কে কামরুলের শালা। প্রবাসী নুরুলের ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে তারা স্বীকারোক্তি দেন।
মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর নৌ-পুলিশের ইনচার্জ প্রদীপ কুমার মিত্র বলেন, সৌদি আরব যাওয়ার জন্য গত শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসে তানিম। পাসপোর্ট চেক করার পর ধরা পড়ে সে হত্যা মামলার আসামি। এ সময় ইমিগ্রেশন পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মুলাদী থানায় সোপর্দ করে। সেখান থেকে গতকাল শনিবার বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তানিমকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তানিম ও তার দুলাভাই (বর্তমানে সিঙ্গাপুর প্রবাসী কামরুল ইসলাম) এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। হত্যার শিকার নুরুল আমিন ও কামরুল ইসলাম সম্পর্কে চাচাতো ভাই। এ দুজন সিঙ্গাপুরে একসঙ্গে থাকতেন। সেখান থেকে নুরুল দেশে ফিরে আসেন। আর কামরুল গ্রুপ ভিসায় সিঙ্গাপুরে লোক নেওয়ার প্রলোভন দিয়ে নুরুল আমিনের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু কাউকে সিঙ্গাপুর নেননি। এমনকি টাকাও ফেরত দেননি। লোকজনের ভয়ে গত বছর ৭ অক্টোবর গোপনে বাংলাদেশে আসেন কামরুল।
প্রদীপ কুমার মিত্র বলেন, কামরুল দেশে ফিরে মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করেন। পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে নুরুলকে মুলাদী শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ অক্টোবর নুরুল ও তার শালা তানিমসহ কামরুলকে নিয়ে ট্রলারে আড়িয়াল খাঁ নদীতে ঘুরতে বের হন। ট্রলারে থাকাবস্থায় নুরুল মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় পেছন থেকে নাইলনের রশি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন শালা-দুলাভাই। পরে হাত-পায়ে ইট বেঁধে লাশ আড়িয়াল খাঁ নদীতে ফেলে দেন।
নৌ-পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এরপর ১৩ অক্টোবর কামরুল সিঙ্গাপুর চলে যান। এর মধ্যে ১১ অক্টোবর মুলাদীর নাজিরপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর সাহেবের চর এলাকায় নুরুলের লাশ ভেসে ওঠার পর পুলিশ উদ্ধার করে। ঘটনার পর দিন নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে মুলাদী থানায় মামলা করেন। বিভিন্ন থানায় সংবাদ পাঠিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে বরিশাল মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি আরও জানান, গত ১৪ অক্টোবর ফতুল্লা থানায় নুরুল আমিনের বোন সোনিয়া আক্তারের জিডির সূত্র ধরে পরিচয় শনাক্ত করে কামরুলের শ্বশুর খোরশেদ আলম মীরকে আটক করা হয়। এরপর হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন খোরশেদ। ওই সময় থেকে পলাতক ছিলেন তানিম। গোপনে ভিসা করে সৌদি যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়।