ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

স্ত্রীর প্রতি রাজার অকৃত্রিম ভালোবাসা

রাহাদ সুমন,বরিশাল প্রতিনিধি।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2023-01-13, 12.00 AM
স্ত্রীর প্রতি রাজার অকৃত্রিম ভালোবাসা

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় রাজার প্রিয়তমা  স্ত্রীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার নির্দশণ অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘি। যেখানে বছরজুড়েই থাকে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের আনাগোনা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেহ-মনে প্রশান্তি এনে দেয়। দিঘির চারপাশের গাছপালার ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন, কোথায় মন যে হারিয়ে যাবে তা বুঝে ওঠাই কঠিন। তারপর দীঘির স্বচ্ছ জলে পা ভেজানোর আনন্দটা তো থাকছেই। সব মিলিয়ে ক্লান্তিহীন, শীতল আবহে যেনো মন জুড়িয়ে যায় এখানটায়।

এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের কাছে দিঘিটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা উন্নয়ন কাজ করেছে জেলা প্রশাসন।

 বর্তমানে এখানে বেশ কয়েকটি হরিণ,উট পাখি,ময়ুর,বানর রয়েছে। দিঘির জলে ডানা ঝাপটে ভাসতে দেখা যায় রাজা হাঁস ও পেচি হাঁস। ডাহুক ও পানকৌড়ির দেখা মেলে দীঘির পাড়ে। রয়েছে  শত শত কবুতর। শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মূখর হয়ে ওঠে । দিঘির স্বচ্ছ জলে রয়েছে রুই,কাতলসহ  নানা প্রজাতের মাছ। টিকিট কেটে মৎস্য শিকারীদের এসব মাছ শিকার করতে দেখা যায়।  

দীঘি কেন্দ্রীক পাখিদের আনাগোনা বাড়ানো জন্য সম্প্রতি কৃত্রিম ভাবে গাছে গাছে বসানো হয়েছে পাখির বাসা। হরহামেশা বিলুপ্ত প্রায় নানান পাখির ডাক শোনার পাশাপাশি দেখাও মেলে এখানে।

বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বরিশাল-বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দীঘির অবস্থান।

১৭৮০ খৃষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ এলাকার প্রজা সাধারণের পানির সংকট নিরসন ও প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার নির্দশণ স্বরূপ  মাধবপাশায় একটি বৃহৎ দীঘি খনন করেন। কথিত রয়েছে রাজা শিব নারায়ণের কথায় স্ত্রী দুর্গা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যতদূর হেটেছেন ততদূর আয়তনে দীঘিটি খনন করা হয়। পরে  রাজা স্ত্রী  দুর্গার  নামে দীঘিটির নামকরণ করেন যা পরবতীতৈ দুর্গাসাগর দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতœতত্ত্ব সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিবর্তে দুর্গাসাগর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে জেলা প্রশাসন। দুর্গাসাগরের তিন দিকে ঘাটলা ও দীঘির ঠিক মাঝখানে ৬০ শতাংশ ভূমির উপর টিলা রয়েছে।

ঐতিহাসিক এ দীঘির জলাভূমির আয়তন ২৭ একর। এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন বৃক্ষ শোভিত বন। সবমিলিয়ে দুর্গাসাগরের আয়তন ৪৫ দশমিক ৪২ একর। দীঘির মধ্যখানে রয়েছে গাছ-গাছালিতে ছায়া দৃষ্টিনন্দন একটি দ্বীপ। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ ু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের মন্ত্রী আ.রব সেরনিয়াবাতের উদ্যোগে দীঘিটি পুনরায় খনন করা হয়।

সম্পূর্ণ দীঘিটি উঁচু সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত।  দুই দিকে প্রবেশের জন্য দুইটি গেট থাকলেও একটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এ দিঘির সৌন্দর্য বর্ধণে দু’প্রান্তের দুটি গেট (ফটক) লাগোয়া নানা অবকাঠামো উন্নয়ন চলমান রয়েছে। চৈত্রমাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু ধর্মালম্বীরা এখানে পূর্ণ স্নানের উদ্দেশ্যে সমবেত হন।