পুণে জেলার দুই গ্রাম। দুই গ্রামের মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি হলে ২ কিলোমিটার। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সেই দুই গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন দুই ব্যক্তি। এক জনের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও অন্য জন ছিলেন বেপাত্তা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। কিন্তু কয়েক দিন পরেই বেঁচে ওঠেন ‘মৃত’। প্রকাশ্যে আসে ভয়ঙ্কর এক অপরাধের কাহিনি। যার নেপথ্যে ছিল বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক।এই অপরাধের কাহিনির মূল চরিত্র দু’জন। এক জন চরহোলি খুর্দ গ্রামের ৫৮ বছর বয়সি কৃষক কেরবা থরভে ওরফে সুভাষ। অন্য জন পাশের গ্রামের রবীন্দ্র ঘেনান্দ (৪৮)।১৭ ডিসেম্বর সকালে, চরহোলি খুর্দের স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা ক্ষেতের মধ্যে থেকে একটি মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার করেন। সেই দেহ পড়েছিল চাষ করার একটি যন্ত্রের ধারালো ব্লেডের নীচে। গ্রামবাসীরা দেখেন চাষ করার ওই বিশেষ যন্ত্রটি সুভাষের কাছে ছাড়া গ্রামের আর কারও কাছে নেই। শীঘ্রই প্রকাশ্যে আসে, ওই কৃষিজমির মালিক চাষ করার জন্য সুভাষের ওই যন্ত্র ভাড়া নিয়েছিলেন।সুভাষের পরিবারকে দেহ শনাক্ত করার জন্য ডাকা হলে সুভাষের দুই ছেলে বাপু ও মহেশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন। পরনের কাপড় দেখে তাঁরা নিশ্চিত করেন, এই দেহ তাঁদের বাবা সুভাষেরই।পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল, কাজ করার সময় কোনও ভাবে চলন্ত যন্ত্রের সামনে পড়ে যান সুভাষ। তখনই যন্ত্রের ব্লেডে মুণ্ডচ্ছেদ হয় তাঁর। এ-ও মনে করা হয় যে, সুভাষের মাথা কোনও বন্যপ্রাণী তুলে নিয়ে গিয়েছে।দেহ নিয়ে ঘরে ফিরে আসে সুভাষের পরিবার। সুভাষকে শ্রদ্ধা জানাতে গ্রামের মাঝামাঝি তাঁর ছবি দিয়ে একটি হোর্ডিংও লাগানো হয়। ২২ ডিসেম্বর সকালে ইন্দ্রায়ণী নদীর তীরে সুভাষের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সুভাষের স্ত্রী অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছিলেন। তাই সব দায়িত্ব সামলেছিলেন দুই ছেলেই।অন্য দিকে, ১৬ ডিসেম্বর রাত থেকে নিখোঁজ হন প্রায় দু’কিমি দূরে অন্য এক গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্র। পানাসক্ত রবীন্দ্র মাঝেমধ্যেই মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতেন না। তাই তাঁর ঘরে না ফেরা নিয়ে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে খুব একটা চিন্তা করেননি। কিন্তু পরের দিনও তিনি ঘরে না ফেরায় পরিবারের সদস্যদের টনক নড়ে।১৭ এবং ১৮ ডিসেম্বর অপেক্ষা করে ১৯ ডিসেম্বর রবীন্দ্রের ছেলে নিখিল আলন্দি থানার পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। নিখিল পুলিশকে জানান, রবীন্দ্র পানাসক্ত ছিলেন। তাঁর কাছে মোবাইল ছিল না। কিন্তু রাতে বাড়ি না ফিরলে তিনি অন্যের মোবাইল থেকে ফোন করে বাড়ি না আসার কথা জানিয়ে দিতেন। সে বার তার ব্যতিক্রম হওয়ায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন।পুলিশ আশপাশের সিসি ক্যামেরা খতিয়ে দেখে, তাঁকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল নিহত সুভাষের সঙ্গে। পুলিশ আশপাশের সিসি ক্যামেরা খতিয়ে দেখে, তাঁকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল নিহত সুভাষের সঙ্গে। একই ট্রাক্টরে চেপে তাঁরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছিলেন। সুভাষের মৃত্যুর সঙ্গে রবীন্দ্রের অন্তর্ধানের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ।এর মধ্যেই ২৩ ডিসেম্বর শেল পিম্পলগাঁও গ্রামে খুড়তুতো বোনের বাড়িতে দেখা দেন ‘মৃত’ সুভাষ। সুভাষকে দেখে ভিরমি খান তাঁর বোন। জ্ঞান ফেরার পর ২৪ ডিসেম্বর সকালে সুভাষের বোন পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানান। খবর পাঠানো হয় সুভাষের গ্রাম চরহোলি খুর্দে।গ্রামবাসীরা ভাবেন বোনকে ‘ভূত’ হয়ে দেখা দিয়েছেন দাদা। পুলিশ সুভাষের বোনের দাবির ভিত্তিতে শেল পিম্পলগাঁও গ্রামের আশেপাশের এলাকা তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালায়। ওই দিনই পাশের গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় ‘মৃত’ সুভাষকে।