আমার ছোট জানালাতে পোষায় না। ছাদ থেকে মেঝে অবধি, চওড়া জানালা দরকার। একদিকে নয়, চারদিকেই চাই। সেই জানালা কাঁচ বদ্ধ হবে না। তার কোনও কপাট থাকবে না। আসুক হাওয়া, বাইরের ধুলো বালি। শরীরে মাখামাখি করে থাকুক। শুধুই যে দখিন হাওয়া, হেমন্তের প্রশান্তি, শরতের রোদ্দুর, আষাঢ়ের মেঘ এসে ঢুকে পড়ে তাই নয়। দুষ্টু হাওয়াও চলে আসে। আসে গুপ্তচর হাওয়া। চুপিচুপি, কখনও ছদ্মবেশে। ওদের বদ মতলব জানি। তবুও ঝেড়ে ফেলে দেই না। ভালোবাসায় লেপ্টে রাখি। এই যে দুনিয়ার এতো আয়োজন থাকতে, ওরা আমাকে ঘিরে আছে, ওদের আমাকে নিয়ে এত মনোযোগ, তাই ছদ্মবেশী ও বদ হাওয়াকে ভালো না বেসে উপায় কী?
বন্ধু, অনুজ ও স্বজনদের অনেকেই বলে আমি কেন দু’ হাত বাড়িয়ে রাখি। খুলে রাখি দুয়ার। এই যে পাশে বসে আছে, কাঁধে হাত, প্রকাশ্য প্রেম, মাতম এদের কেউ কেউ ছদ্মবেশি। তারা দূরে গিয়ে বদনামের স্লোগানে মাতে। আমার স্বপ্ন আটকে দিতে চায়। ষড়যন্ত্রের নকশা আঁকে। এই মানুষগুলোকে তবু কেন জানালা দিয়ে, দুয়ার দিয়ে ঢুকতে দেই। আমার এই কাণ্ডে অনেকেই অভিমান করে বসে। কখনও কখনও দূরে সরে যায়। ভাবে আমি মানুষ চিন্তে ভুল করছি। ঠকে যাচ্ছি, হেরে যাচ্ছি। ওদের অভিযোগ, অভিমানে হাসি আমি। ওদের বলি, দেখ মানুষগুলো নিজের কাজ থেকে আমাকে নিয়ে মেতে আছে। নিজের সময় অপচয় করেই, আমার গুরুত্ব বাড়াচ্ছে। আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই বদনাম করছে। একবার এ ঘর আরেকবার ও ঘরে ঠেলে দিচ্ছে। কী যে ব্যস্ততা। এ ব্যস্ততাকে সম্মানতো দেখাতেই হয়। আমার কাজের মতো আরেকটি কাজ হয়তো করে তোলার মুরোদ নেই, তাই নিজ ব্যর্থতার দায় মেনে, আমার সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়। তাদের ব্যর্থ এই অসহায়তায় প্রবোধ দিতেই কাছে ডাকি। ভালোবাসি।
কথাগুলো ব্যক্তিগত উচ্চারণের মতো শোনালো। মনে হতে পারে ব্যক্তিগত অহংবোধ প্রকাশ করছি। আসলে এই চিত্র সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোতেও। ইতিহাসের পাতা উল্টে গেলে গুপ্তচর, ছদ্মবেশি ভালোবাসার মানুষদের প্রতাপ দেখবো। তাদের মায়ার জাল বা জাদুতে রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতারা ভুল করেছেন। সেই ভুলে নেতার ব্যক্তিগত ভুলের মতোই, ক্ষতি হয়েছে হয়তো দল এবং রাষ্ট্রের। কিন্তু নেতা ভালোবাসায় কখনও কৃপণ হননি। তিনি ভালোবেসে গেছেন। ভালোবাসার উদারতায় হয়তো নেতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু নিঃস্ব হননি। ভালোবাসা। ফিরে এসে বানের জলের মতো। সেই ভালোবাসায় নেতা অমর হয়েছেন।
নেতা অমর হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মাঝে রাষ্ট্র ও রাজনীতির বিস্তর ক্ষতি হয়ে যায়, তাই ভালোবাসায় নাকি সাবধানী হতে হয়। ডাক্তার আমাকে সেদিন চশমা ধরিয়ে দিলেন। আমি বললাম, হঠাৎ চশমা কেন? ডাক্তার বলেন- মন খুলে, প্রাণ খুলে ভালোবাসুন। তবে ঠিকঠাক দেখে আলিঙ্গন করুন। ভুল হয়েছে অনেক। আমি চশমা নিয়েছি। রাষ্ট্রকে পরাবে কে? রাজনৈতিক পালাবদলে দেখেছি কিভাবে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এলে ছদ্মবেশি ভালোবাসার মানুষের বদল ঘটে। প্রকৃত প্রেম প্রত্যাখ্যাত হয়। অভিমানে দূরত্ব বাড়ে। বিপর্যয় নেমে আসে দলীয় কাঠামোতে। রাষ্ট্র এবং সাধারণ মানুষের হয় সর্বনাশ। ভুল ভালোবাসার সর্বনাশ ব্যক্তি হয়তো সয়ে যায় একা একা, কিন্তু রাষ্ট্র পর্যায়ের ভুলের মাশুল গুনতে হয় জাতিকে। তাই ছদ্মবেশীদের দূরে ঠেলে, প্রকৃত প্রেম, প্রেমিককে কাছে ডাকা দরকার। কাক না কোকিল ডাকছে, বসন্তের হাওয়া চিনে নিতে হবে। বসন্ত মানে বিপ্লব। এবারের বসন্তের বিপ্লব হোক, পথের প্রকৃত সাথীকে চিনে নেবার। ভালোবাসবো আমি, আপনি এবং নেতারা। ভালোবাসা ছাড়া ব্যক্তিপ্রেম, দেশপ্রেম কিছুই হয় না। যেমন আমি প্রতিদিন নতুন করে প্রেমে পড়ি বাংলাদেশের। আপনার মতোই। লেখক: গণমাধ্যম কর্মী