নোয়াখালীর কবিরহাটের জগদানন্দ গ্রামে বিজয় মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর চালানোর অভিযোগ উঠেছে ৩নং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মুনাফ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক কামাল উদ্দিন বাবুলের বিরুদ্ধে। আর দর্শক সারিতে ভিড় বাড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের।স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে দুই ইউপি চেয়াম্যানের ছাত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা, নগ্ন নৃত্য ও জুয়ার আসর চলছে। ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন কোম্পানি এ মেলার উদ্বোধন করেন। ধাননিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমির হোসেনের স্বাক্ষরিত টিকেটে চলছে নগ্ননৃত্যের আসর।
গতকাল শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে মুকবুল চৌধুরী হাট বিজয় মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মেলায় রয়েছে নামসর্বস্ব ১৫-২০টি দোকান। মেলার মূল আকর্ষণ হলো নগ্ননৃত্য ও জুয়ার আসর। রাত ১১টার থেকে উঠতি বয়সী স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আর গ্রাম্য যুবকদের উপচেপড়া ভিড়। নগ্ন নৃত্য চলাকালে মুঠোফোনে ভিডিও এবং ছবি ধারণ একেবারেই নিষিদ্ধ। মুঠোফোনে ভিডিও এবং ছবি ধারণ করলে মেলা কমিটির লোকজন ছিনিয়ে নেয় মুঠোফোন। এসব বিষয়ে ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন কোম্পানির কাছে স্থানীয় এলাকাবাসী একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি।
জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মুকবুল চৌধুরী হাট বিজয় মেলার অনুমোদন নেয় মেলা আয়োজক কমিটি। মেলায় তারা যাত্রাপালার অনুমোদন নিলেও রাতের আঁধারে চলছে নগ্ন নৃত্য আর ভ্রাম্যমাণ বেচাকেনা চলছে চোলাই মদ-ইয়াবা ও গাঁজা। মেলা আয়োজক কমিটির একাধিক সদস্য জানান, কবিরহাট থানার পুলিশের সাথে চুক্তি করে মঙ্গলবার রাত থেকে মেলায় ১২টি জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেলা শুরু হয়েছে বলে মেলা পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিয়ত উল্যাহ সাইমুন জানান, মেলায় প্রথম দিন থেকেই চলছে অশ্লীল নাচ-গান। তাতে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকেরা নষ্ট হতে বাধ্য। অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিয়মিত যাত্রা দেখতে যায়। এ জন্য তারা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে। জুয়ার কারণে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক পরিবার।
ধাননিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমির হোসেন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মুনাফের স্বাক্ষর জাল করে অনেকে টিকেট নেয়। এজন্য তার স্বাক্ষরে যাত্রার টিকেট করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেলা আয়োজন কমিটির সহ-সভাপতি আবদুল মান্নান মুনাফ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন বাবুল বলেন,। যদি আপত্তিকর কিছু হয়ে থাকে থা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন কোম্পানি বলেন, আমি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেবারে জানি না বললে ভুল হবে। আমি মন থেকে মেলা পরিচালনার সাথে জড়িত নেই। দায়িত্বে থাকার কারণে অনেক কিছুতে আমাকেও দোষারোপ করা হয়। তবে নিষেধ করার পরও একটি পক্ষ এই জুয়ার আসর বসিয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে, এলাকাবাসী নগ্ন নৃত্য চলার বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ করার সত্যতাও নিশ্চিত করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে গতকাল আমরা মেলায় গিয়েছি। নগ্ন নৃত্য ও জুয়া বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠিন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতিমা সুলতানা বলেন, তারিখ সহ ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।