বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী পালন করে আসছে । তারই ধারাবাহিকতায় এবার পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা বিতরণ করেছে গুইমারা রিজিয়ন এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরের দিকে পাহাড়ে প্রান্তিক মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা কর্মসুচীর উদ্বোধন করেন ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামাল মামুন‘র সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য মো. জামাল উদ্দিন।
এসময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল হক, গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেমং মারমা, গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদ, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ননের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী ও গুইমারা ইউপি চেয়ারম্যান নির্মল নারায়ন ত্রিপুরা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এর সদস্যবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিগণ ও গুইমারা রিজিয়নের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আগত অতিথি তাদের মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য সমাপনান্তে প্রধান অতিথি কর্তৃক ১০ টাকার সুপারশপ উদ্বোধন, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান পরিদর্শন এবং সর্বশেষে গুইমারা বাজার সংলগ্ন ব্রীজের পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সম্প্রীতি বিপনী উদ্বোধন করেন, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এক দিনের এই আয়োজনে এক টাকায় এক কেজি চাল, চার টাকায় মুরগী, দুই টাকায় ডাল, এক টাকায় ১০টি ডিম এভাবে মাত্র দশ টাকায় ব্যাগ ভর্তি বাজার করার সুযোগ পেয়েছে তিনশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির লোকজন। একই ভাবে বিনামুল্যে ডাক্তারী পরামর্শ ও ঔষধ পেয়েছে তিনশ জন। অন্যদিকে ‘সম্প্রীতি বিপনী’ থেকে পোশাক ও জুতা ক্রয়ের সুযোগ পেয়েছে ৫০জন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা পাহাড়ে নিম্ন-আয়ের মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা পৌছে দিতে আমরা নানা কার্যক্রম করে থাকি। তারই অংশ হিসেবে গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন ৬৫০ পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হলো।
পাহাড়ে সেনাবাহিনীর মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে জানিয়ে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামাল মামুন বিএএমএস, এনডিসি, পিএসসি, জি, বলেন, গুইমারা রিজিয়নের আওতায় নিয়োজিত সেনা, বিজিবি, আনসার, পুলিশসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনী শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সবসময়ই প্রান্তিক জনগোষ্ঠির পাশে ছিল। ভবিষ্যতেও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের কর্মতৎরতা অব্যাহত থাকবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, সেনাবাহিনী পাহাড়ের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠির শিক্ষা, চিকিৎসা ও দুর্গম জনপদে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌম রক্ষার কাজে নিজেদের নিয়োজিত থেকে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া প্রান্তি জনগোষ্টির মানবিক কাজে নিজেদের যুক্ত করেছেন। পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ও পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে যে প্রাচীর ছিল তা ভেঙে দিতে ভুমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। তিনি পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভুয়শী প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান।