নড়াইল পৌরসভার মেয়র, সচিব, প্রধান সহকারীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল হক। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৌরসভায় এসে এ নিয়ে তদন্ত করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফখরুল হাসান।অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৭৭টি চেকের মাধ্যমে তিন কোটি ৩৫ লাখ তিন হাজার ৬৭৭ টাকা তোলা হয়। পৌরসভার প্রধান সহকারী শিমুল কুমার ঘোষ, বদলি হওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. লালু সরদার, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি রমিচুর রহমানসহ কয়েকজন কর্মচারী এ টাকা উত্তোলন করেন। উত্তোলনকৃত টাকা নানাভাবে আত্মসাৎ করে মিথ্যা বিল-ভাউচার করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বর্তমান মেয়র আঞ্জুমান আরা ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকেই এসব দুর্নীতির নেতৃত্বে আছেন। পৌর নাগরিকদের টাকা নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। ইজিবাইকের লাইসেন্স বাবদ উত্তোলিত সাড়ে ১৭ লাখ টাকার ছয় লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি সাড়ে ১১ লাখ টাকা মেয়র নিজে আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমান মেয়র গত দুই বছরে কোনো মাসিক সভা করে, তা রেজুলেশ করেননি। সব উত্তোলন ও ব্যয় পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই মেয়র এবং সচিব গ্রহণ করেছেন। ব্যয়ের অধিকাংশ খাতেই ক্যাশ বই নেই, বেশিরভাগ দুর্নীতির অর্থ তড়িঘড়ি ভাউচার তৈরি করে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
দুর্নীতির বিষয়ে প্রধান সহকারী শিমুল কুমার ঘোষ বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলার নির্বাহী ক্ষমতা একমাত্র পৌর মেয়রের। এছাড়া অভিযোগে আমারসহ কয়েকজনের নাম এসেছে। সুতরাং আমি কিছু বলতে পারবো না।’অন্যদিকে অভিযোগ আছে, পৌরসভার সচিব মো. ওহাবুল আলমের তত্ত্বাবধানে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের নড়াইল ও রূপগঞ্জ শাখা, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে টাকা তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মো. ওহাবুল আলম বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। উত্তোলনের ওইসব টাকা খরচের যথাযথ তথ্য প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করছি।অভিযোগকারী প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল হক বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে কবে জঙ্গল-ড্রেন পরিষ্কার হয়, তা আমিই জানি না। এসব খাতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে পাঁচ-সাত লাখ টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে স্পষ্ট দুর্নীতির প্রমাণ আছে। এ ধরনের দুর্নীতি নড়াইল পৌরসভায় আগে ঘটেনি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘পৌরসভার দুর্নীতি হলে তা নির্বাহী হিসেবে আমার ঘাড়েই বর্তায়। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি চলে গেলে যাদের সুবিধা হয়, তারাই এসব সাজাচ্ছে। ইজিবাইকের টাকা কাউন্সিলররা যা নিয়েছেন, তা হিসাবে আসেনি।’ জেলা প্রশাসক মো. ফখরুল হাসান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখন এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।