ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫০টি স্লুইস গেট আছে। এগুলোর মধ্যে ৩৭টিই বিকল। বাকি ১৩টি আংশিক সচল থাকলেও পানি সরবরাহ নেই বললেই চলে। ডিএসসিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ অবস্থায় বিকল স্লুইস গেট সচল করে ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকার জলাবদ্ধতা কাটাতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ও প্রাকৃতিক খালগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি ও স্টর্ম ওয়াটার বিদ্যমান পাইপ নর্দমা ও বক্স কালভার্টের মাধ্যমে বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশন ও স্লুইস গেট হয়ে খাল-নদীতে গিয়ে পড়ে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ঢাকার চারদিকে ডিএসসিসি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫০টি স্লুইস গেট রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি সম্পূর্ণ বিকল ও ১৩টি আংশিক সচল। ডিএসসিসির অঞ্চল ৩-এর ২১টি স্লুইস গেটের মধ্যে ১৭টি অচল, ৪টি আংশিক সচল। অঞ্চল ৪-এর ১৬টি স্লুইস গেটের মধ্যে ৭টি অচল, ৯টি আংশিক সচল এবং অঞ্চল ৫-এর ১৩টি গেটের মধ্যে সবক’টিই অচল।
এতে আরও বলা হয়, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৫০টি স্লুইসগেট সংস্কার করে ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন।
অঞ্চল ৩-এর স্লুইস গেটগুলো হচ্ছে- মীর শওকত আলী রোড, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল রোড, ঝাউচর গুদারাঘাট, নয়াগাও নদীর পাড়া, খলা মুড়া ঘাট, গাজীর ঘাট, শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়, খালপাড়, মুসলিম বাগ-১, মাদরাসা ঘাট, নূরবাগ ঘাট, মাওলানা ঘাট, পাঠাগার ঘাট, মুসলিমবাগ-২ (মাঠ), মুসলিমবাগ-৩, লাল গুদাম কমিউনিটি সেন্টার, তারা মসজিদ, বরিসুর ঘাট, ময়দার মিল, কয়লাঘাট/নৌকা ঘাট, মাতবর বাজার ঘাট, লোহার ব্রিজ, মুসলিমবাগ লবনের ফ্যাকটরি ও মনির চেয়ারম্যান গলি। এরমধ্যে নয়াগাও নদীর পাড়া, খলা মুড়া ঘাট, গাজীর ঘাট ও মনির চেয়ারম্যান গলির স্লুইস গেট আংশিক সচল রয়েছে।
অঞ্চল ৪-এর গেটগুলো হচ্ছে বেরীবার পাশে (২টি), কামালবাগ, মদিনা ট্যাংকির পাশে, দেবীদাস ঘাট রোডের সম্মুখে, সোয়ারীঘাট রোডের বামে ও ডানে, পানঘাট, রাজারঘাট, মিটফোর্ট হাসপাতালের পিছনে (৩টি), বাবু বাজার ব্রিজের নিচে (খোলা), বাদামতলী মসজিদ ঘাট, বাদামতলী, সদরঘাট/ওয়াইজ ঘাট, বিআইউব্লিউটিসি অফিসের পেছনে, ওয়াইজঘাট, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পাশে, উল্টিনগঞ্জ পাবলিক টয়লেটের সামনে, শ্যামবাজার আলী গার্মেন্টসের সামনে (২টি) ও শ্যামবাজারের সামনে (২টি)।
এর মধ্যে কামালবাগ, মদিনা ট্যাংকির পাশে, দেবীদাস ঘাট রোড, সোয়ারীঘাট রোড, পানঘাট, রাজারঘাট, মিটফোর্ট হাসপাতালের পেছনে (৩টি) ও বাদামতলী মসজিদ ঘাটের গেটগুলো অংশিক সচল রয়েছে।
অঞ্চল ৫-এর গেটগুলো হচ্ছে- কটনমিল মসজিদ সংলগ্ন, ২নং সিটি গেট, বিটি ফার্নিচার, বুড়িগঙ্গা ক্লাব, তারেক স-মিল, রবি চন্দন গোসাইবাড়ী, বিল ব্যারাক গুদারাঘাট, ৩০/৩ আলমগঞ্জ, গঙ্গাশাহা মাজার, পোস্তগোলা শশ্মানঘাট ও রশিদ মস্তান মাজার। এগুলোর সবক’টিই বিকল।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের বলেন, ‘ওয়াসা থেকে তাদের খালগুলো আমাদের সিটি করপোরেশনে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট দীর্ঘদিন বিকল পড়ে আছে। ওয়াসার মতো এগুলোও সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। হস্তান্তর করা হলে স্লুইস গেটগুলো সচল করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবো আমরা।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক একেএম ওয়াহেদ উদ্দিন চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও কোনও উত্তর দেননি।