ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ই মে ২০২৪ , বাংলা - 

বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ করছে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2022-10-20, 12.00 AM
 বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ করছে বিএনপি

পরিবহন বন্ধসহ শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে যে কোনো মূল্যে খুলনায় গণসমাবেশ সফল করতে অটল বিএনপি। শান্তিপূর্ণভাবে তারা এই সমাবেশ করতে চায়।ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে দলটি বলছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সরকারের দুঃশাসনে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। তারা এই সরকারের পদত্যাগ চায়। সুতরাং সরকারের সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের মতো খুলনায়ও জনতার ঢল নামবে। এই সরকার যে ‘অজনপ্রিয়’ এবং বিএনপি যে দেশের জনপ্রিয় দল—এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে সেটিই জানান দিতে চান তারা।

বিশেষত নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে নেতাকর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে সমাবেশের মাধ্যমে। সমাবেশ সফল করতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় মাইকিং করা হয়েছে ১৪ বছর পর। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। আর পরিবহন বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগেই নেতাকর্মীদের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে খুলনায় পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে—তারা বিএনপির সমাবেশে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে না।সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে আগামী শনিবার বিকেলে খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ হবে। ইতোমধ্যে প্রশাসন সমাবেশের লিখিত অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

এদিকে, এই সমাবেশ সামনে রেখে মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো ২১-২২ অক্টোবর খুলনা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিএনপির দাবি, ২২ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে বাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা।খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের গণসমাবেশ কেন্দ্র করেও বাস বন্ধ করা হয়েছিল। খুলনায়ও তার বাইরে কিছু হয়নি। এটা আওয়ামী লীগের নেতাদের ইন্ধনেই হয়েছে। তবে বাস বন্ধ সত্ত্বেও নির্ধারিত দিনেই খুলনায় গণসমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর বিএনপি।’

জানা যায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমাবেশ সফলে শহরের বাইরের বিএনপি নেতাকর্মীদের আগেই খুলনায় পৌঁছাতে দলের পক্ষে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশের জনস্রোতকে কোনো প্রতিবন্ধকতাই রুখতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম  বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ময়মনসিংহের মতো খুলনায়ও তারা ঠিক একইভাবে দুদিন আগে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে; কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। মানুষ হেঁটে দলে দলে বিভিন্নভাবে সমাবেশে উপস্থিত হবে। লাখ লাখ মানুষ তাদের মতো করে সমাবেশে উপস্থিত হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ভীত হয়ে সরকার, সরকারি দল ও প্রশাসন বিভিন্নভাবে সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে খুলনায় ২২ তারিখের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা যতই আঘাতপ্রাপ্ত হোক না কেন, যে জোয়ার দেখা দিয়েছে—সেটা কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী অথবা অন্য কোনো দল এই জনস্রোতকে ঠেকাতে পারবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা বিএনপির কার্যালয়ে দলের বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। দুদু বলেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ করব, আপনারা বাংলাদেশের প্রশাসন। কোনো দলীয় প্রশাসন না। আপনারা কোনো দলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যে সমাবেশ করতে চলেছি, আপনারা তাতে সহযোগিতা করবেন।

সমাবেশ কেন্দ্র করে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপির ধারাবাহিক এই সমাবেশ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের ওপর আঘাত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহে আমাদের নেতাকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এখন খুলনায় যানবাহন বন্ধ করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, নদীপথেও আমাদের বাধা দেওয়া হবে। খুলনায় আমাদের মাইক কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় গিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

কর্মসূচিতে যত বাধা আসবে, আন্দোলনে তত সফলতা আসবে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে গতকাল দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একযোগে কাজ করছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করছে

তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে শাসকদলীয় ক্যাডাররা নেতাকর্মীদের নানা ধরনের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করছে।এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে থাকা খুলনা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু সক্রিয় হয়েছেন। প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, অনুসারীদের নিয়ে খুলনার সমাবেশে যোগ দেবেন। মঞ্জু বলেন, সরকারের বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি সফল করবে। কোনো কিছুতেই আন্দোলন দমানো যায় না, সমাবেশ বন্ধ হবে না।

তবে সরকার বিএনপির সমাবেশে বাধা দেয়নি; বরং সহযোগিতা দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর বনানীতে তিনি বলেন, দসরকার বিএনপির সমাবেশে বাধা তো দেয়ইনি; বরং প্রশাসনিক সহযোগিতা দিচ্ছে। তাদের সমাবেশে লোকসমাগম হলে বলে সরকার ব্যর্থ, আবার লোকসমাগম না হলে বলে সরকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।'

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ কখনো বিএনপির সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি, করবেও না। খুলনার সমাবেশেও করবে না। ধর্মঘট ডেকেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক। তারা যদি তাদের পরিবহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাহলে সরকার বা আওয়ামী লীগের কী করার আছে।'