ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

বিনা ছুটিতে ৩৫৫ দিন বিদেশে শিক্ষক!

স্টাফ রিপোর্টার ।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2022-10-16, 12.00 AM
বিনা ছুটিতে ৩৫৫ দিন বিদেশে শিক্ষক!

দেশের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশ সফরে রয়েছে কড়াকড়ি। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো শিক্ষককে একদিনের জন্যও দেশের সীমানা পাড়ি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। এমনকি রাজধানীর বাইরে যেতেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রধানকে অবহিত করতে হয়। যদিও এসব নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাসের পর মাস বিদেশে অবস্থান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক ক্ষণিকা গোপ। তথ্য অনুযায়ী, ওই শিক্ষক ২০২১ সালের ২০ মে থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গত দেড় বছরে চারটি সফরে মোট ৩৫৫ দিন দুটি দেশে (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র) অবস্থান করেছেন। কিন্তু এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি বা ছুটি নেননি। এ সময় ক্লাসসহ জরুরি একাডেমিক কাজ অনলাইনে সারতেন ওই শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, তিন মাস বা এর কম সময় ছুটির জন্য বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের প্রধানকে মাধ্যম করে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করা হয় এবং তিন মাসের অধিক ছুটির জন্যও প্রধানকে মাধ্যম করা হয়, তবে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভায় উত্থাপন করতে হয়। সুতরাং ক্ষণিকা গোপ এ ধরনের কোনো আবেদন করেছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিঅ্যান্ডডি কমিটির একজন সদস্য বলেন, এ সময়ের আগে থেকেই আমি কমিটির সদস্য হিসেবে আছি, কোনো মিটিং মিস করেছি বলে মনে হয় না। সুতরাং কোনো শিক্ষক ছুটির আবেদন করলে আমার জানার কথা। আমার জানামতে, ক্ষণিকা গোপ দেশেই আছেন এবং অসুস্থ বলে পরিচালক স্যার আমাদের বিভিন্ন মিটিংয়ে জানিয়েছেন।

২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বিদেশে ভ্রমণ করা শিক্ষকদের জন্য অনুমোদিত সরকারি আদেশের (জিও) সার্কুলারগুলো আইবিএর ওয়েবসাইটে রয়েছে। কিন্তু সেখানেও ক্ষণিকা গোপের ওইসব সফরের জন্য ইস্যুকৃত কোনো জিও পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভাগুলোর আলোচ্যসূচিতেও ওই শিক্ষকের ছুটির জন্য করা কোনো সুপারিশ পাওয়া যায়নি। এছাড়া তিনি নিয়মিত ক্লাস এবং একাডেমিক কমিটির সভায় অনলাইনে অংশ নিতেন। কিন্তু কোনো শিক্ষক ছুটিতে দেশের বাইরে থাকলে এসব একাডেমিক কাজের অংশ নিতে হয় না বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষক।

 

তবে ছুটি নিয়েই বিদেশ গমনের কথা জানিয়েছেন ক্ষণিকা গোপ। তিনি বলেন, অবশ্যই ছুটি নিয়ে গিয়েছিলাম। চাকরি করলে ছুটি ছাড়া কি যাওয়া যায়?কার মাধ্যমে বা কোন প্রক্রিয়ায় ছুটি নিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নাম বলতে গিয়ে আটকে যান। পরে বলেন, আপনার এত মাথাব্যথা কেন? ব্যস্ত আছি, পরে কথা হবে।

এ ধরনের অপরাধের শাস্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কঠোর। এর আগে ছুটির মেয়াদ শেষের পর দেশের বাইরে অবস্থান ও ছুটি না নিয়ে বিদেশে যাওয়ায় দুজন শিক্ষককে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। এমনকি ছুটি অনুমোদনের পর প্রদত্ত ছুটি শুরুর মাত্র একদিন আগে দেশ ত্যাগ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন অধ্যাপককে পদ অবনমনের শাস্তিও দেয়া হয়েছিল। সেখানে বিনা ছুটিতে প্রায় এক বছর বিদেশে অবস্থান করা অনেক বড় অপরাধ বলে বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ক্ষণিকা গোপ বিদেশে বসে টানা দুই সেমিস্টার ধরে অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ইনস্টিটিউটের একাধিক সিঅ্যান্ডডি কমিটির সদস্য  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে বিবিএর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল হক খান বলেন, করোনার পরে গত প্রায় দেড় বছর তিনি অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন। বারবার বলার পরও অসুস্থতার কথা বলায় মানবিক দৃষ্টিতে অনলাইনে ক্লাস নিতে দেয়া হয়। কারণ সেমিস্টারের মাঝামাঝি হওয়ায় কোর্সটিতে নতুন কোনো শিক্ষককেও দেয়া সম্ভব হয়নি। এ সময় শিক্ষকদের দুটি নির্বাচনে দুবার ভোট দিতে তিনি (ক্ষণিকা গোপ) সশরীরে এসেছিলেন। এ বাদে আমরা তাকে দেখিনি। ক্লাস ছাড়াও এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষাসহ বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রম হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজেই তাকে সশরীরে দেখা যায়নি।

এসব বিষয়ে আইবিএ পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই। আপনি যা পেয়েছেন, খবরের কাগজে লিখে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ক্ষণিকা গোপের এসব অনিয়ম নিয়ে সরাসরি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর সম্প্র্রতি একটা বেনামি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এতে বিনা ছুটিতে ওই শিক্ষকের একাধিকবার বিদেশ সফর এবং সেসব দেশে অবস্থান করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপাচার্য বলেন, একটা চিঠি আমাদের কাছে এসেছে। অভিযোগের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে তা কতটুকু সত্য। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।