চলতি বছর ডিসেম্বরে দলের জাতীয় সম্মেলনের পর আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে জোরালোভাবে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সারাদেশে জেলা পর্যায়ে এই নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে জেলা উপজেলাসহ মেয়াদ উত্তীর্ণ সব পর্যায়ে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এছাড়া কয়েকটি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনও এই সময়ের মধ্যে করা হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।
চলতি বছর ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডিসেম্বরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে। সে অনুযায়ী যাবতীয় বিশেষ করে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ ৩৩টি জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে। এর মধ্যেই এ সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হবে বলে জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। এছাড়া ৩ শতাধিক উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে বলে দলের নেতারা জানান।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ কয়েকটি সংগঠনের সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা জানান। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। মহানগরের থানা সম্মেলন চলছে। নভেম্বরের শেষের দিকে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ এর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যেই সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে আগামী পুরো বছর ধরেই জোরালোভাবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, নির্বাচনী প্রস্তুতির মধ্যে প্রচার কার্যক্রম একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার চলমান আছে। সম্মেলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারও চলছে । সম্মেলনের পরে নির্বাচনী প্রচার কাজ আরও জোরালো হবে। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা প্রচারে নামবে। নির্বাচনী প্রচারে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলায় জনসভা, স্থগিত সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। তবে কোভিড পরিস্থিতির উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কোভিড পরিস্থিতির অবনতি না হলে তিনি জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী প্রচার চালাতে জেলা পর্যায়ে সফর শুরু করতে পারেন বলেও ওই নেতারা জানান।
এদিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী প্রাপ্তি হয়েছেন তাদের ব্যাপারে দল কিছুটা নমনীয় অবস্থানে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই অবস্থান নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচনে ইতোমধ্যে ২৭ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন । বাকি জেলাগুলোতে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে সেই বিবেচনায় দলের পক্ষ থেকে তেমন কোনো হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার এটা চলমান আছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছ, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলমান। সম্মেলনের পর নির্বাচনী প্রচার জোরেশোরে শুরু করা হবে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনী প্রচারে নামবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কি অবস্থায় দাঁড়ায় সেটাও একটা বিষয়।
শেখ হাসিনাকে গণমুখী নেতা উল্লেখ করে আব্দুর রহমান বলেন, তিনি সব সময়ই জনগণের মধ্যে যেতে চান। তবে কোভিড বাস্তবতার কারণে তিনি ভার্চ্যুয়ালি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ক্ষেত্রে আমাদের যে সিদ্ধান্ত এখানেও সেটাই। দলের শৃঙ্খলার বিষয়টা তো একটা ব্যাপার আছে।