“সেটা ২০০৪ সাল। সিঙ্গাপুরে অবসর সময় কাটাচ্ছিলাম। একদিন হোটেলে বসে অনলাইনে সাংবাদিকতার বিভিন্ন কিছু ব্রাউজ করে দেখি অনলাইন এগিয়ে আসছে। মোটে কিছুদিন আগে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডক অনলাইনে সংবাদমাধ্যম চালুর ওপর জোর দিতে শুরু করেছেন। হঠাৎ মনে এলো বাংলাদেশেও এমন একটা কিছু করা যায় কিনা। ভাবনার সাথে সাথে কাজেই লেগে পড়লাম। মাইস্পেসডটকম এ সার্চ দিলাম একটি নাম। নিউজ২৪.কম। দেখলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় এরই মধ্যে ওই নামে একটি অনলাইন সংবাদপত্র চালু রয়েছে। এবার বাংলাদেশের সংক্ষেপ ‘বিডি’ যোগ করে পেয়ে গেলাম একটি ডমেইন নেম। বিডিনিউজ২৪.কম। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিনে নিলাম ডমেইন নেমটি। দেশে ফিরেই ঝাপিয়ে পড়লাম। একদল উদ্যমী কর্মীবাহিনী পেয়ে গেলাম যারা একটি নতুন মাধ্যমকে তাদের কর্মস্থল হিসেবে বেছে নিলো। আর দ্রুতই যাত্রা শুরু করলো বিডিনিউজ২৪.কম। যা এখন দেশে পুরো এক যুগের ইতিহাস।”ঠিক এভাবেই বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতা চর্চার সূচনালগ্নের কথাগুলো বলছিলেন আলমগীর হোসেন।। একটি অনুষ্ঠান শেষে আলাপ কালে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন আলমগীর হোসেন।
বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে সুপরিচিত, স্বনামধন্য এই সাংবাদিক বর্তমানে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কম এর এডিটর ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটি সংবাদমাধ্যমকে এই প্রতিযোগিতার বাজারে স্থান করে নিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ কর্মী বাহিনী আর দক্ষতার সঙ্গে সে কর্মীদের পরিচালনা করার বিষয়টিও জরুরি।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে এটাই যেমন কারণ, তেমনি একই কারণে মাত্র দুই বছরেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে গিয়েছিলো বিডিনিউজ২৪। সেসময় বিডিনিউজের যারা কর্মী ছিলেন তাদের অনেকেই বর্তমানে দেশের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমে দায়িত্বশীল ভূমিকায় রয়েছেন। বাংলানিউজের কর্মীদেরও অনেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গিয়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন, বলেন তিনি।
ষাটোর্ধ্ব এই প্রথিতযশা সাংবাদিক সাড়ে চার দশকের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ডালা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করেন। বলেন, সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় দিক একাগ্রতা। পেশাকে ভালোবেসে কাজ করে যাওয়া।আলমগীর হোসেন বলেন, ৩২ বছর কাগজের পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার পর এক সময় ছেড়ে দেয়ার কথা। অনেক সহকর্মীই বলছিলেন আপনার এখনো অনেক কিছু দেয়ার রয়েছে। নিজেও কাজ ছেড়ে থাকতে পারলাম না। আবার ফিরে শুরু করি সাংবাদিকতা। ভালোবাসা থেকেই এই লেগে থাকা।
বিশ্বের শতাধিক দেশে ঘুরে, বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট কাভার করে, আর বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদপত্র টেলিভিশন রেডিওর সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তার ভিত্তিতে অর্জিত অভজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সাংবাদিকতায় কঠোর পরিশ্রমের বিষয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিটিকেও পরিশ্রমী হতে হবে। নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর আমি নিজে রিপোর্টারকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে যেমন যেতে বলি, তেমনি নিজের বাসা থেকে অফিসে এসে সারারাত নিউজরুমে কাটাই। এমন একটি পরিস্থিতিতে কোনও সংবাদকর্মীর পক্ষেই ঘুমোনো সম্ভব হয় না।
এখন অনলাইনের যুগ। অনেক ধরনের ডিভাইস রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করছে কর্মীরা। একটা সময় ছিলো টাইপরাইটারের যুগ। আর সে সময়ই আমি সাংবাদিকতা শুরু করি। সেসব দিনে আমি নিজে সবসময় একটি টাইপ রাইটার বহন করতাম, বলেন আলমগীর হোসেন।
ভবিষ্যতে কাগজের পত্রিকার দুর্দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জরিপগুলোতে দেখতে পাই সবচেয়ে বেশি, আশি শতাংশ পাঠক স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে অনলাইন পত্রিকায় ভিজিট করছেন। খবর জানার জন্য এখন আর কেউ সংবাদপত্র পড়ে না। যেগুলোতে কিছু বিশেষ প্রতিবেদন থাকে সেগুলোতে চোখ বোলানো হয়। না হলে দেখাই হয় না। কারণ কাগজের প্রতিটি ঘটনাই পুরনো।
পত্রিকার আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একসময় লন্ডন টাইমস বড় আকারে বের হতো। এতোবড় পত্রিকার পাতা খুললে পাশের মানুষের গাঁয়ে যেয়ে পড়তো। এখন সেগুলো ট্যাবলয়েড হয়ে এসেছে। একই অবস্থা সানডে টাইমসের। এসবই আরো সহজ করে তোলার জন্যেই অনলাইনে চলে আসছে। বাংলাদেশে সবচাইতে জনপ্রিয় দৈনিকটির কলেবরও ছোট। এছাড়াও কাগজের পত্রিকার কারণে বৃক্ষ নিধন এবং পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টিও তুলে ধরেন বার্তা২৪.কম এর এডিটর ইন চিফ।