ঢাকা, শনিবার ২০ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

"আমি সেই মেয়েটির কথা ভুলতে পারছি না"

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক ।। ঢাকাপ্রে২৪.কম

2022-07-23, 12.00 AM

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সেনারা বিবিসিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বেসামরিক লোকদের হত্যা, নির্যাতন এবং ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। এই প্রথমবারের মতো তারা সবিস্তারে বর্ণনা করেছে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাবলী- এবং তারা বলছে, এগুলো করতে তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছিল।সতর্কবাণী: এই প্রতিবেদনে যৌন সহিংসতা এবং নির্যাতনের বর্ণনা রয়েছে।"তারা আমাকে নির্যাতন, লুটপাট, এবং নিরপরাধ লোকদের ধর্ষণ করতে আদেশ দিয়েছিল।"

মাউং উ বলছেন, তিনি মনে করেছিলেন তাকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন রক্ষী হিসেবে।

 

কিন্তু তিনি ছিলেন এমন একটি ব্যটালিয়নের অংশ - যারা ২০২২ সালের মে মাসে একটি বৌদ্ধ আশ্রমে লুকিয়ে থাকা বেসামরিক লোকদের হত্যা করেছিল।

 

"আমাদের আদেশ দেয়া হয় পুরুষদের সবাইকে ধরে আনতে এবং তার পর তাদের গুলি করে হত্যা করতে।" তিনি বলছেন, "সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো যে আমাদেরকে বয়স্ক মানুষ এবং একজন নারীকেও হত্যা করতে হয়েছিল।"

 

একজন কর্পোরাল সহ ৬ জন সৈন্য এবং তাদের শিকার হওয়া লোকদের জবানবন্দী থেকে ধারণা পাওয়া যায় - একটি সেনাবাহিনী কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তাদের পরিচয় গোপন রাখতে এ রিপোর্টে মিয়ানমারের সবারই নাম বদলে দেয়া হয়েছে।

 

এই সৈন্যরা সম্প্রতি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেছেন। তারা মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধরত বেসামরিক মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর একটি শিথিল নেটওয়ার্ক পিপলস ডিফেন্স ফোর্স বা পিডিএফের আশ্রয়ে আছেন।

 

মিয়ানমারে গত বছর এক অভ্যুত্থানে অং সান সূচির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। এখন তারা বেসামরিক লোকদের সশস্ত্র অভ্যুত্থান দমন করার চেষ্টা করছে।

 

২ঢ়ী ঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হধষ মৎবু ষরহব

গত বছর ২৯শে ডিসেম্বর মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ইয়াই মিয়েত গ্রামের ওপর চক্কর দিতে থাকে তিনটি হেলিকপ্টার। এতে থাকা সৈন্যদের ওপর আদেশ ছিল গুলি চালানোর।

 

সেখানে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন পাঁচ জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি। তারা আলাদা আলাদাভাবে বিবিসির সাথে কথা বলেছেন।তারা বলছেন, তিনটি দলে ভাগ হয়ে সেনাবাহিনী গ্রামে ঢোকে, এবং নির্বিচারে নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

 

"আদেশ ছিল, যে কাউকে দেখামাত্র গুলি করতে হবে" - বলছিলেন কর্পোরাল আউং। মিয়ানমারের একটি প্রত্যন্ত জঙ্গলে একটি গোপন স্থান থেকে কথা বলছিলেন তিনি।

 

তিনি বলেন, "কিছু লোক ওই জায়গাটাকে নিরাপদ ভেবে সেখানে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু সৈন্যরা সেখানে আসার পর তারা দৌড়াতে শুরু করে এবং আমরা তাদের গুলি করতে থাকি।"

 

কর্পোরাল আউং স্বীকার করেন যে তার ইউনিট পাঁচজন লোককে গুলি করে হত্যা করে এবং তাদের কবর দেয়।

"আমাদের আরো আদেশ দেয়া হয়েছিল যে গ্রামের সব বড় এবং ভালো বাড়িগুলোতে আগুন লাগানোর" - বলছেন তিনি।

 

সৈন্যরা গ্রামের পথ দিয়ে যেতে যেতে বাড়িগুলোতে আগুন লাগাচ্ছিল, আর চিৎকার করছিল "পোড়াও! পোড়াও!"

 

কর্পোরাল আউং চারটি বাড়িতে আগুন লাগিয়েছেন। অন্য যাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয় তারা বলেছেন, প্রায় ৬০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, ফলে গ্রামের বেশির ভাগ জায়গাই ছাই হয়ে যায়।

 

গ্রামের বেশির ভাগ লোকই পালিয়ে গিয়েছিল, তবে সবাই নয়। গ্রামের মাঝখানে একটি বাড়িতে লোকজন ছিল।

 

থিহা বলছেন, তিনি ওই অভিযানের মাত্র পাঁচ মাস আগে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।

 

অন্য অনেকের মতোই তাকে ওই জনগোষ্ঠীর ভেতর থেকেই নিয়োগ করা হয়েছিল এবং তিনি বলছেন -তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।

 

স্থানীয়ভাবে এসব সৈন্যদের বলা হয় আংঘার-সিট-থার বা "ভাড়া করা সৈন্য"।

 

সেসময় তাকে ভালো বেতন দেয়া হতো - প্রতি মাসে ২০০,০০০ মিয়ানমার খাট (প্রায় ১০০ মার্কিন ডলার)। তার পরিষ্কার মনে আছে ওই বাড়িটিতে কী ঘটেছিল।

তিনি একটি বাড়িতে আগুন লাগানোর সময় দেখলেন যে একটি কিশোরী মেয়ে লোহার শিকের পেছনে আটকা পড়েছে।

 

"আমি তার চিৎকার ভুলতে পারছি না, এখনও তা আমার কানে বাজছে, আমার মনে তা গেঁথে আছে" - বলছিলেন তিনি।

 

তিনি তার ক্যাপ্টেনকে মেয়েটার কথা বললেন। ক্যাপ্টেন জবাব দিলেন, "আমি তোমাকে বলেছি যাকেই দেখবে সবাইকে মেরে ফেলতে হবে।" সুতরাং থিহা ওই ঘরটির মধ্যে আগুনের গোলা ছুঁড়ে দিলেন।

 

কর্পোরাল আউংও সেখানেই ছিলেন। তিনিও জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হওয়া মেয়েটির আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছিলেন।

 

"এটা শোনা ছিল এক মর্মান্তিক ব্যাপার। বাড়িটা যখন জ্বলছে, তখন আমরা প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বার বার তার গলা শুনতে পাচ্ছিলাম," বলছিলেন তিনি।

 

বিবিসি ওই মেয়েটির পরিবারকে খুঁজে বের করে করেছে। পুড়ে ছাই হওয়া বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়েই তারা বিবিসির সাথে কথা বলেছেন।

 

মেয়েটির আত্মীয় উ মিন্ট বলেন, মেয়েটির মানসিক সমস্যা ছিল। সেকারণে তার বাবা-মা কাজে যাবার সময় তাকে বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন।

 

"সে পালাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ওরা তাকে আটকে রাখে এবং পুড়িয়ে মারে" - বলছেন তিনি।

 

শুধু এই মেয়েটিই যে এই সৈন্যদের শিকার হয়েছে তা নয়।

 

থিহা বলছেন, তিনি অর্থের জন্যই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন - কিন্তু তাকে যা করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং যে নৃশংসতা তিনি দেখেছেন তাতে তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন।

 

তিনি বলেন ইয়েই মিয়েতের একদল তরুণী মেয়ের কথা - যাদেরকে তারা গ্রেফতার করেছিলেন।

 

থিহা জানান, সেনা কর্মকর্তা ওই মেয়েদেরকে তার অধীনস্থদের হাতে তুলে দেন। বলেন, "তোমাদের যা ইচ্ছা তাই করো।"

 

তার পর তারা ওই মেয়েদের ধর্ষণ করে, তবে থিহা বলেন, তিনি নিজে এতে জড়িত হননি।আমরা ওই মেয়েদের মধ্যে দুজনকে খুঁজে বের করি। পা পা এবং খিন তোয়ে নামের এই দুই তরুণী বলেন, তারা পালানোর চেষ্টা করার সময় রাস্তার ওপর সৈন্যদের সামনে পড়ে যান।

 

তারা ইয়েই মিয়েত গ্রামের বাসিন্দা নন, সেখানকার একজন দর্জির কাছে এসেছিলেন তারা।

 

সৈন্যদের তারা বার বার বলেন - তারা পিডিএফের যোদ্ধা নন, এমনকি ওই গ্রামের বাসিন্দাও নন। কিন্তু তাদেরকে তিন রাতের জন্য একটি স্থানীয় স্কুলে বন্দী করে রাখা হয়।

 

প্রতি রাতে তাদের ওপর বারংবার যৌন অত্যাচার চালায় নেশাগ্রস্ত সেনারা, বলেন তারা।

 

"তারা একটা সারোং দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলে, এবং মাটিতে ফেলে দেয়। তার পর তারা আমার কাপড় খুলে ফেলে এবং আমাকে ধর্ষণ করে," বলছিলেন পা পা - "তারা যখন ধর্ষণ করছিল তখনো আমি চিৎকার করছিলাম।"

 

তিনি বার বার সৈন্যদের থামতে বলেন, কিন্তু তারা তার মাথার চারদিকে আঘাত করতে থাকে, বন্দুক উঁচিয়ে হুমকি দেয়।

 

"আমাদের এটা মেনে নিতে হয়, কারণ আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে আমাদের হয়তো মেরে ফেলা হবে" - কাঁপতে কাঁপতে বলছিলেন পা পা-র বোন খিন তোয়ে।

 

এই মেয়েরা বলছিলেন, তারা এতই আতংকিত ছিলেন যে তারা নির্যাতনকারীদের দিকে ভালো করে তাকাতেও পারছিলেন না। তবে তারা মনে করতে পারেন যে তাদের মধ্যে সামরিক ইউনিফর্ম পরা এবং সাদা পোশাকধারী - দুরকম লোকই ছিল।

 

"তারা যখন তরুণী মেয়েদের ধরতো" - থিহা বলছিলেন, "তাদেরকে ধর্ষণ করার সময় তারা বলতো 'তোমরা পিডিএফকে সমর্থন করো বলেই' এটা করা হচ্ছে।"

 

ইয়েই মিয়েতে সহিংসতায় কমপক্ষে ১০ জন লোক নিহত হয়, এবং তিন দিনের মধ্যে আটজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানা যায়।

 

যেসব পাশবিক হত্যাকান্ডে ভাড়াটে সৈন্য মাউং উ অংশ নিয়েছিলেন - সেগুলো ঘটেছিল ২০২২ সালের ২রা মে, ওহাকে ফো গ্রামে। এই গ্রামটিও সাগাইং অঞ্চলে অবস্থিত।

 

তিনি বর্ণনা দিয়েছেন - তিনি যে ৩৩ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনে ছিলেন, তার সদস্যরা একটি বৌদ্ধ আশ্রমের লোকজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। ওই আক্রমণের পরপরই বিবিসি যে বিচলিত করার মত ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ পায় - তার সাথে মাউং উ-র বর্ণনা মিলে যায়।

 

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নয়টি মৃতদেহ সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে - যার মধ্যে একজন নারী ও একজন পাকা চুলওয়ালা লোককে পাশাপাশি পড়ে থাকতে দেখা যায়।

 

তারা সবাই সারোং ও টি-শার্ট পরা।

 

ভিডিও থেকে ধারণা করা যায় যে খুব কাছে থেকে এবং পেছন থেকে তাদের গুলি করা হয়েছিল।

 

ঘটনায় জড়িত থাকা সৈন্যটি বলেছেন যে এ জন্য তিনি অনুতপ্ত

 

যে গ্রামবাসীরা ওই হত্যাকান্ড দেখেছেন তাদের সাথেও আমরা কথা বলেছি।

 

তারা বয়স্ক লোকটির পাশে থাকা নারীটিকে শনাক্ত করেছেন। তার নাম মা মো মো, এবং তার সাথে ছিল তার সন্তান ও একটি ব্যাগ ভর্তি সোনার জিনিস। তিনি সৈন্যদের অনুনয় করছিলেন যাতে তারা তার জিনিসপত্রগুলো না নেয়।

 

"সাথে শিশু থাকা সত্ত্বেও সৈন্যরা তার জিনিসপত্র লুট করে এবং গুলি করে তাকে হত্যা করে। তারা পুরুষদের লাইন করে দাঁড় করায় এবং একে একে তাদের গুলি করে" - বলছিলেন লা লা নামে একজন - যিনি ঘটনাস্থলে থাকলেও তাকে মারা হয়নি।

 

নিহত মহিলার শিশু সন্তানটি বেঁচে আছে এবং এখন তার আত্মীয়স্বজনদের কাছে আছে।

 

লা লা বলছেন, তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন সৈন্যরা ফোনে বড়াই করছে যে তারা আট-নয়জন লোককে হত্যা করেছে। তারা বলছিল, মানুষ মারাটা খুবই 'উপাদেয়' এবং সে দিনটা ছিল তাদের এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দিন।

 

তিনি বলছেন, তারা গ্রাম ছেড়ে যাবার সময় 'বিজয়! বিজয়!" বলে শ্লোগান দিচ্ছিল।

 

আরেকজন নারী বলছিলেন, তিনি তার স্বামীকে হত্যার দৃশ্য দেখেছেন। "তারা প্রথমে তার উরুতে গুলি করে, এবং তাকে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে বলে। তার পর তার নিতম্বে গুলি করে এবং সবশেষে গুলি করে মাথায়।"

 

তিনি জোর দিয়ে বলেন তার স্বামী পিডিএফের সদস্য ছিলেন না।

 

"সে আসলে তালের আবাদ করতো এবং ঐতিহ্যগত উপায়ে জীবিকা অর্জন করতো। আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। আমি এখন জানি না কিভাবে জীবন ধারণ করবো।"

 

মাউং উ বলছেন, তিনি তার কাজের জন্য অনুতপ্ত। "সে জন্যই আমি আপনাদের কাছে সবকিছু বলছি" - বলেন তিনি - "আমি চাই সবাই জানুক যাতে আর কারো ভাগ্যে এরকম না ঘটে। "

বিবিসি যে ছয়জন সৈন্যের সাথে কথা বলেছে তারা সবাই মিয়ানমার জুড়ে বাড়িঘর ও গ্রাম পোড়ানোর কথা স্বীকার করে।

 

তারা আভাস দেয় যে এটা হচ্ছে একটা পরিকল্পিত কৌশল যাতে প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রতি জনসমর্থন নষ্ট করা যায়।

 

এমন এক সময় এসব কথা জানা গেল - যখন অনেকে বলছেন, সামরিক বাহিনী একাধিক ফ্রন্টে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে ।

 

মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাবলীয়র ওপর নজর রাখছে এমন একটি গবেষণা দল হচ্ছে মিয়ানমার উইটনেস। তারা গত ১০ মাসে একই কায়দায় গ্রাম পুড়িয়ে দেবার ২০০টিরও বেশি খবর যাচাই করেছে।

 

তারা বলছে, এ ধরনের অগ্নিসংযোগের মাত্রা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কমপক্ষে ৪০টি আক্রমণ হয়। এর পর মার্চ ও এপ্রিল মাসে কমপক্ষে ৬৬টি এরকম ঘটনা ঘটে।

 

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পুড়িয়ে দেয়া গ্রাম

 

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর 'পোড়ামাটি নীতি' নেয়ার দৃষ্টান্ত এটিই প্রথম নয়।

 

২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও একই নীতি নেয়ার খবর ব্যাপকভাবে পাওয়া গিয়েছিল।

 

মিয়ানমারে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত পার্বত্য এলাকাগুলো অনেক দশক ধরেই এমন আক্রমণের সম্মুখীন।

 

এসব জাতিগোষ্ঠীর যোদ্ধারা অনেকে এখন সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এ গৃহযুদ্ধে পিডিএফকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহায়তা দিচ্ছে।

 

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, সৈন্যদের বর্ণনা থেকে তাদের যেরকম অবাধে লুটপাট ও হত্যা চালাতে দেয়া হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে - এ সংস্কৃতি মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে।

 

সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব নৃশংসতা চালানোর অভিযোগের জন্য কারো জবাবদিহি করার ঘটনা অতি বিরল।

 

তবে সৈন্যদের দলত্যাগ ও পিডিএফের হাতে নিহত হবার কারণে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে এখন ক্রমশঃ আরো বেশি করে সৈন্য ও মিলিশিয়া ভাড়া করতে হচ্ছে।

 

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ থেকে প্রায় ১০,০০০ লোক দলত্যাগ করেছে - বলছে পিপলস এমব্রেস নামে একটি গোষ্ঠী - যা সাবেক সৈন্য ও পুলিশদের নিয়ে গঠিত।

 

"সামরিক বাহিনী একাধিক ফ্রন্টে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যেতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে" - বলেন সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মাইকেল মার্টিন।

 

"অফিসার ও তালিকাভুক্ত র‍্যাংক- উভয় ক্ষেত্রেই লোক পেতে সমস্যা হচ্ছে, তাদের নিয়োগে সমস্যা হচ্ছে, বহু লোক মারা যাচ্ছে, সরঞ্জাম ও রসদপত্র পেতে সমস্যা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা যেভাবে জায়গা বা নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে তা থেকে এ বিষয়গুলো বোঝা যাচ্ছে।"

 

এ রিপোর্টে বর্ণিত ঘটনাগুলো ঘটেছে ম্যাগোয়ে এবং সাগাইং - এ দুটি অঞ্চলে। আর এ দুটিই হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লোক নিয়োগের জায়গা।

 

কিন্তু এখানকার তরুণরা এখন সেনাবাহিনীর পরিবর্তে পিডিএফে যোগ দিচ্ছে।

 

কর্পোরাল আউং স্পষ্ট করেই বলেছেন কেন তিনি দলত্যাগ করেছেন।

 

তিনি বলেন, "আমি যদি বুঝতাম যে সামরিক বাহিনীই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে -তাহলে আমি পক্ষত্যাগ করে জনগণের কাতারে চলে আসতাম না।"

 

তার কথা, সৈন্যরা এখন একা তাদের ঘাঁটির বাইরে যাবার সাহস পায় না। কারণ তারা ভয় পায় যে পিডিএফ তাদের মেরে ফেলবে।

 

"আমরা যেখানেই যাই - বড় দল নিয়ে যাই। কেউই বলতে পারবে না যে আমরা কর্তৃত্ব বিস্তার করছি," বলেন তিনি।

 

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল জও মিন তুনের কাছে আমরা আমাদের তদন্তে পাওয়া অভিযোগগুলো তুলেছি।

 

এক বিবৃতিতে তিনি সেনাবাহিনী কর্তৃক বেসামরিক লোকদের টার্গেট করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, উল্লিখিত দুটি অভিযানেরই লক্ষ্যবস্তু ছিল আইনসঙ্গত - এবং যারা নিহত হয়েছে তারা ছিল "সন্ত্রাসবাদী।"

 

সেনাবাহিনী গ্রাম পোড়াচ্ছে - এমন অভিযোগও অস্বীকার করে তিনি বলেন, পিডিএফই বরং অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে।

 

কিভাবে এবং কখন এই গৃহযুদ্ধ শেষ হবে তা বলা কঠিন। কিন্তু মনে হচ্ছে মিয়ানমারের লক্ষ লক্ষ লোককে এ আতংক তাড়া করে ফিরবে।

 

আর, শান্তি প্রতিষ্ঠায় যত বেশি দেরি হবে, ধর্ষণের শিকার হওয়া খিন তোয়ের মত আরো বহু নারী ততই সহিংসতার শিকার হবার ঝুঁকিতে থাকবেন।

 

তিনি বলছেন, তার জীবনে যা ঘটেছে তার পর তিনি আর বেঁচে থাকতে চান না, এবং তিনি আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছেন।

 

তিনি তার প্রেমিককেও বলতে পারেননি যে তার জীবনে কি ঘটেছে ।