ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

পৌর মেয়রের পকেটে ইজারার কোটি টাকা!

জেলা প্রতিনিধি ॥ ঢকিাপ্রেস২৪.কম

2022-07-12, 12.00 AM
 পৌর মেয়রের পকেটে ইজারার কোটি টাকা!

ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদের বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়ক ও জায়গা ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটে পোরার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) স্লুইচ গেটও গত কয়েক বছর ধরে ইজারা দিয়ে রেখেছেন তিনি।ক্ষমতাসীন দলের একজন উপজেলা সভাপতি ও স্থানীয় সরকারের কর্তাব্যক্তি হিসেবে তার এই অবৈধ কাজ মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভূঞাপুর-তারাকান্দি, ভূঞাপুর-গোবিন্দাসি ও শিয়ালকোল-ঘাটাইল-গোপালপুর সড়ক এলাকার লোকজনও।

ভূঞাপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামের মো. ছালাম মণ্ডলের ছেলে মো. কামরুল ইসলামকে গত পয়লা বৈশাখ থেকে আগামী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত (বাংলা বছর হিসেবে) সওজের জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী কাঁচা বাজারটি ১২ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়।ইজারা পাওয়ার পর কামরুল ইসলাম পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬০৫ টাকা এবং ৫ শতাংশ আয়কর হিসেবে ৬৪ হাজার ৫৩৫ টাকা (কোড নং ১-১১৪১-০১২০-০১১১ খাত) গত ২৭ জুন সোনালী ব্যাংক ভূঞাপুর শাখায় চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করেন।

সরেজমিন ভূঞাপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সওজের সড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক ছোটবড় দোকান। উপজেলার বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত এ বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনছেন। বাজারটির নামও দেওয়া হয়েছে কাঁচা বাজার।

সওজের এ জায়গা (কাঁচাবাজার) ইজারা দিয়ে পৌরসভার মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ প্রতিবছরই মোটা অংকের অর্থ আদায় করে থাকেন। তাই প্রতিদিন বাজারের দোকানগুলো থেকে ৩০ থেকে ১০০ টাকা আদায় করা হয়। বাদ পড়ে না চায়ের দোকান, মাছ বিক্রেতারাও।

স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, বাজারের মাছ বিক্রির অংশটি মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের কাছ থেকে ইজারা নেন কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে মাস প্রতি ৪০ হাজার টাকায় মাছবাজারের অংশটি আবার ডাক নেন আরিফ নামে আরেক ব্যবসায়ী। তাই তিনি প্রতিদিন বাজারের এ অংশ থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে ইজারার ‘রেট’ তোলেন।

ইজারার ৫০ টাকা রেট থেকে বাদ যান না ছোট ব্যবসায়ীরাও। করলা, কচু, ধুন্দল বিক্রি করা দিনে এনে দিন খাওয়া মানুষের কাছ থেকেও ৫০ টাকা করে ইজারার খাজনা নেওয়া হয়।কয়েকজন চা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে তারা সারাদিন বেচা-বিক্রি করে যে অর্থ আয় করেন, তার পরিমাণ খুবই কম। এ আয় দিয়েই তাদের সংসার চালাতে হয়। প্রতিদিন ৩০ টাকা করে তাদের কাছ থেকে ইজারার রেট নিলে মাসে ৯০০ টাকা করে বেশি খরচ হয়। অথচ, আগে তারা সাবলীলভাবে ব্যবসা করতেন।

জানা গেছে, গত কয়েকমাস আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন অবৈধভাবে বসানো বাজার ও দোকান উচ্ছেদ করে। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই একই জায়গায় আবারও দোকান নির্মাণ হয়ে যায়। শুধু সওজের রাস্তার পাশের জায়গা নয়, ইজারা দেওয়া হয়েছে সংস্থাটির সড়কও। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রাক থেকে ইজারা নামে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের চাঁদা। যার সিংহভাগ চলে যায় ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদের পকেটে।

এমন অব্যবস্থাপনার সমাধান দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়রাও এর প্রতিকার চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের সঙ্গে কথা হলে প্রথমে তিনি সরকারি জায়গা ইজারা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে স্বীকারও করেন।  তিনি বলেন, কাঁচাবাজারটি সওজের জায়গায় স্থাপিত হয়েছে। নিজের পৌরসভায় হওয়ায় তিনি ইজারা দিয়েছেন। রাস্তার পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় লোকজনের চলাচলে অসুবিধা হয়। সড়কটি পৌরসভার সীমানায় পড়ায় সেটিও ইজারা দেন।

ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ট্রাক থেকে টাকা তোলার বিষয়ে শুনেছি, এটি নাকি পৌরসভা ইজারা দিয়েছে। সওজের সড়ক পৌরসভা ইজারা দিতে পারে কিনা এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য না করলেও বলেছেন, অভিযোগ এলে বা অবৈধ হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, তাদের জায়গা বা সড়ক কোনোভাবেই পৌরসভা বা অন্য কেউ ইজারা দিতে পারে না। এ ব্যাপারে বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলীউর রহমান বলেন, আমি ভূঞাপুরের বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে মেয়রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। যদি এমন কোনো কিছু হয়ে থাকে, তা অবশ্যই অন্যায়। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবার আবেদন করা হবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি এ ব্যাপারে বলেন, সওজের সড়ক বা জায়গা পৌরসভা ইজারা দিতে পারে কিনা বা এ বিষয়ে কোনো আইন আছে কিনা তার জানা নেই। তবে, যা হয়েছে তা অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।