গত কয়েক বছর ঢাকার পোস্তায় চামড়ার বাজারে যে ধস নেমেছিল এ বছর কিছুটা স্বস্তির কথা জানিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে সন্ধ্যা নাগাদ চামড়া কম আসায় ট্যানারি মালিক এবং আড়তদাররা আশঙ্কায় আছেন যে তারা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন কিনা।কোরবানির ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জবাই হওয়া পশুর চামড়া সংগ্রহ করে লালবাগের পোস্তার দিকে ট্রাক বোঝাই করে আনতে শুরু করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
তবে অন্যান্য বছরগুলোয় তুলনায় এবারে পোস্তায় ভিড় বেশ কম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন শোভন গত ছয় বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করে আসছেন। কিন্তু এ বছরের মতো পোস্তায় এতো ফাঁকা চিত্র তিনি দেখেননি।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আগে বিকালে এই সময়ে পোস্তায় দাঁড়ানোর জায়গা মিলতো না। আজকে ট্রাক নিয়ে একেবারে (ভেতরে) ঢুকে গেছি। চামড়া কম আসছে। কারণ আগের বার লস করে অনেকেই এই বছর ব্যবসা করছে না।"
বিগত বছরগুলোয় ঢাকার আশেপাশের জেলা উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা চামড়াও পোস্তায় আনা হতো। এবারে সেসব চামড়া পোস্তার দিকে ঢুকতে পারছে না বলে তিনি জানান। এজন্য ভিড় তুলনামূলক কম দেখা গিয়েছে।চামড়া কম থাকায় পোস্তায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে আড়তদারদের সাথে দর কষাকষি করতে। এসব চামড়া সরকার নির্ধারিত দামের চাইতে কিছুটা কমে বিক্রি হলেও আগের বছরগুলোর মতো পানির দাম বলা যাবে না।গত কয়েক বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যেভাবে নাজহাল হয়েছিলেন। এবারে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।দুই পক্ষই কমবেশি তাদের সন্তুষ্টির কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
তবে এবারে পোস্তায় চামড়া কম আসায় সেখানে যে সাড়ে তিনশ আড়তদার আছেন তারা তাদের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন কি না সে আশঙ্কায় আছেন।
পোস্তায় ভিড় কম হওয়ার পেছনে আড়তদাররা মনে করছেন সাভার ও হেমায়েতপুরের ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনেকেনিজেদের সূত্র দিয়ে সরাসরি চামড়া সংগ্রহ করে কিনে ফেলছে।
কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারকে 'বিপর্যয়ের' সাথে তুলনা করছেন অনেকে।
আড়তের মালিক মোহাম্মদ সিরাজ জানান, "এবারে ব্যবসা ভালো না। আমরা চামড়া প্রিজার্ভ করতে লবণ রাখসি, লেবার রাখসি। এগুলো পেছনে খরচ করসি। কিন্তু আমাদের এখানে চামড়া আসতেসে না। কোম্পানিগুলো ডাইরেক্ট খরিদ করতেসে। এজন্য আমরা চামড়ার ভালো রেট দিয়েও পাচ্ছি না।"
তবে পশু কোরবানি এখনো পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় পোস্তায় পুরোদমে শুরু হয়নি কাঁচা চামড়ার কেনাবেচা। রাতের দিকে পুরোদমে চামড়া কেনাবেচা শুরু বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আড়তদাররা বলছেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে সেটা লবণসহ চামড়ার দাম। কিন্তু আজকের দিনে কেউই লবণ দিয়ে চামড়া আনছে না। তাই বেলা গড়ালে চামড়ার মান নষ্ট হবে। এতে দাম অনেকটাই পড়ে যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।
এ কারণে আড়তদাররা চামড়ার পচন রোধ করার জন্য দ্রুত সব চামড়া সংগ্রহ করে তাদের কাছে আনতে বলছেন, নাহলে লবন দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের কথা বলছেন।এবার সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও ছাগল ও খাসির চামড়ার দর একই থাকবে।
গতবছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।এই দর তার আগের বছর বা ২০২০ সালে ছিল ৩৫ থেকে ৪০টাকা। ঢাকার বাইরে গত বছর লবনযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ২০২০ সালে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া গত বছর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। যা ২০২০ সালে ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
এবারে ১ কোটি ১০ লাখ চামড়া সংরক্ষণের লক্ষ্য করেছে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশে পশুর চামড়া সংগ্রহ ও কেনাবেচার সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল আযহা। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে। তাই বছরে চামড়া সংগ্রহের জন্য এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরা।