ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

মানববন্ধনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ক্যাডার বাহিনীর হামলা

কামরুল ইসলাম

2022-07-07, 12.00 AM
মানববন্ধনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ক্যাডার বাহিনীর হামলা

ফরিদপুরের নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এস এম ইফতেখার আজাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষযে স্বাস্থ্য সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভুক্তভোগিরা লিখিত অভিযোগ করেছেন । অভিযোগে জানা একই সাথে গেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত দায়িত্বে নগরকান্দার আযন,বায়ন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদে দায়িত্বে থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লেশমাত্র ছায়া পড়েনি। কোন প্রকার স্বাস্থ্য বিধি,আইন প্রতিপালন করা হচ্ছে না। স্বেচ্চাচারিতা ও অশ্লীলতার অংশ হিসেবে নার্সদের বাচ্চা ধারণ করতেও তার অনুমতি নিতে আদেশ নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিনে সরকারি ঘোষণা মোতাবেক ৭৫টি গাছ না লগিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করারও অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। সুত্র জানায় ডাঃ ইফতেখার আজাদ ২০১৪ সালে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম দূর্নীতি করে আসছেন। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ না দিয়ে ওষুধ কোম্পানীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে কোম্পানীর ওষুধ ব্যবহারে বেশী প্রেসক্রাইব করেন। যদি কোন নার্স দায়িত্বরত অবস্থায় রোগীদের সরকারি ওষুধ দেন তাহলে তিনি নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। আবার এলাকায় বিরোধপূর্ন ঘটনায় পক্ষদের টাকার বিনিময়ে চাহিদামত ইনজুরি সাটিফিকেট প্রদান করেন। স্বাস্থ্য বিধি মতে উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার ( সেকমোদের) দিয়ে শুধুমাত্র রোগী ভর্তি ও ডাক্তারদের সহয়তা করার বিধান থাকলেও ডাঃ আজাদ তাদেরকে দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্বক্ষণিক রোগীদের চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন দিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের মৃত্যু ঝুকির মধ্যে ফেলেছেন। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে নাবিল ফার্মেসীতে নিজ নামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে তার স্বাক্ষরযুক্ত চিরকুটের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তিকৃত রোগীদের চেম্বারে এনে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা প্রদান করারও অভিযোগ উঠেছে।

ডাঃ আজাদ নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার থাকাকালীন একই সাথে ২০১৭ সালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আর গত ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ফরিদপুরের সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তখন তিনি কমপ্লেক্সের কমপাউন্ডে ডাক্তার কোয়ার্টারে থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক ঘটনার অভিযোগ উাঠেছে। ইঞ্জিনিয়ার পেশায় নিয়োজিত তার প্রথম স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রাপ্ত হন। ২০১৯ সালে নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানকৃত নারী চিকিৎসক আয়শা বারমদী লাক্সমীর সাঙ্গে পরকীয়া সম্পকে জড়িয়ে  পড়েন পরবতীতে তাকে বিবাহ কওে দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা বারমদী লাক্সমীসহ সালথা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান ও বসবাস করেন।

অভিযোগে আরো জানা গেছে ডাঃ আজাদ সালথা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব  গ্রহণ করলেও দূর্নীতি,অনিয়ম,খবরদারী ও অবৈধ উপার্জনে অধিকাংশ সময় নগরকান্দা স্বাস্থ্য্ কমপ্লেক্সে ব্যয় করেন। পূনরয় তিনি নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্ব নিতে সেখানে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম খানকে তার পোশা সন্ত্রাসীদের দিয়ে শারিরিক লাঞ্চিত করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিতাড়িত করে নিজেই নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদে আয়ন,বায়ন দায়িত্বে  অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই সাথে দুটি কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে ডাঃ আজাদ সরকারি আদেশ নির্দেশ অমান্য করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দটি ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে  পরিচালনা করে করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুটি তার ব্যক্তিগত চেম্বারের কর্মচারী মৃদুলকে দিয়ে পরিচালনা করেন। মৃদুল প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কমপ্লেক্সে পরিচালনায় মেডিকেল অফিসার,নার্স সহকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে সকলকে আদেশ নির্দেশ প্রদান করেন। কমপ্লেক্সের মেইল আইডি নিজের আয়ত্বে নিয়ে মন্ত্রণলয় বা অধিদপ্তর বা সিভিল সার্জন দপ্তর হতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা বা আদেশ নির্দেশের তথ্য গোপন করতেন।করোনাকালিন সময়ে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা কর্মকর্তা কর্মচারী ও নার্সদের না দিয়ে আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওষুধের টেন্ডার গোপন করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। আবার প্রধানমন্ত্রীর ৭৫ তম জনামদিনে ৭৫টি গাছ লাগানোর সরকারি ঘোষণা থাকরেও কোনো গাছ না লাগিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। নার্স ও তৃত্বীয় শ্রেনীর কর্মচারীদের হয়রানীর অংশ হিসেবে সময়মত তাদের বেতন ফরোয়ার্ড করেন না। আর সরকারি ড্রাইভঅরকে বসিয়ে রেখে সরকারি গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারসহ ব্যাক্তিগত ড্রাইভার দিয়ে পরিচালনা করেন। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্য ব্যাচেলর নাসদের কমপাউন্ডে নার্স ডরমেটরীতে থাকার নিয়ম থাকরেও স্বামী, সন্তানসহ তার আজ্ঞাবহ কর্মচারীদের বসবাস করার ব্যবস্থা করেছেন। কোনো নার্স আন্তঃসত্তা হয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি চাইতে গেলেও তাদের সাথে অশ্লীল আচারণ করা হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আজাদ নির্দেশ দেন আন্তঃসত্তা হতে গেলে আগে তার অনুমতি নিতে হবে।

এসব বিষয়ে নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভুক্তগোগি কর্মচারী ও নার্সগণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী,স্বাস্থ্য ও সেবা সচিব,স্বাস্থ্য মহাপরিচালক,নার্স ও মিডওয়াইফারী মহাপরিচালক,ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক ও ফরিদপুর সিভিল সার্জনকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন কিন্তু এখনো কোনা প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ফরিদপুর এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নগরকান্দা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এস এম ইফতেখার আজাদ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে  সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেন । তিনি বলেন আমি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি বলে জানান। । 

ডাঃ ইফতেখার আজাদের দূর্নীতি নিয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিত দরখাস্ত করায় ডাঃ আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকৃত কমপ্লেক্সের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর হোসেনের কমপ্লেক্সের পাশে জমিতে গত ৩ জুলাই প্রবেশ করে ফলন্ত কলাগাছ ক্ষেতের কলাগাছ কেটে ফেলেছে। ডাঃ আজাদ অভিযোগকারীদের হয়রানী ও ভয়ভীতি দেওয়াসহ অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসে কর্মরত স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে কমপ্লেক্সে নিয়ে তদন্তের নামে অভিযোগকারী নার্স ও সহকরি ডাক্তারদের ডেকে কমপ্লেক্স ডরমেটরীতে দরজা আটকিয়ে জিঞ্জাসাবাদ শুরু করেন। এসময় স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন নার্স ও সহকারি ডাক্তারদের বদলী ও চাকরি চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে ডাঃ আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার হুমকি দেন এবং ডাঃ আজাদ ভাল লোক ও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই মর্মে  মানববন্ধন করার নির্দেশ দেন। 

ছুটিতে আসা স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের অভিযোগ তুলে নেওয়ার হুমকি ধামকি ও পেট বাধাতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আদেশ নির্দেশ এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগকারিদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারর বিরুদ্ধে বেলা ১১.৩০ টায় নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স ও স্বাস্থ্য সহকরিগণ মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে স্থানীয় মেয়র নিমাই সরকার যেগদিলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিএনপি পন্থি ক্যাডার ও কমপ্লেক্সে খাবার সাপ্লায়ার অহাদের নেতৃত্বে মানবন্ধনে বাধা দিতে গেলে স্থানীয় মেয়র নিমাই সরকারের সাথে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে স্থানীয় প্রসাশন এসি ল্যান্ড,থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এবিষয়ে নার্স ও সহকারি ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান আমরা দূনীতিবাজ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অপসারন চাই। তার বিএনপি পন্থি ক্যাডার বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে নিরপত্তার অভাব বোধ করছি বলে জানান।