ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন তারা

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2022-03-30, 12.00 AM
১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন তারা

কেউ রিকশাচালকের ছেলে কেউবা ভ্যানচালকের, কেউ আবার দিনমজুরের সন্তান। কিন্তু তাতে কী? গন্তব্যে পৌঁছাতে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাদের সামনে। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ৬৭ জন।মঙ্গলবার রাতে চাঁদপুর পুলিশ লাইন্স ড্রিল সেডে ট্রেনিং রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনায় নির্বাচিত অনেকেই কোনো প্রকার দালালি বা সুপারিশ ছাড়া নির্বাচিত হতে পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রায় ২ হাজার ২শ আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৬৭ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে জেলা পুলিশ।

কোনো প্রকার দালালি বা আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়ে আবেগ তাড়িত নির্বাচিত সদস্যরা। যাদের কাছে চাকরিটি ছিল সোনার হরিণ। নির্বাচিত হতে পেরে অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশ সুপার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান অনেকেই।

ভ্যানচালক জামাল হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন বলেন, আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি ১২০ টাকার বিনিময় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদের এই চাকরিটা পাবো। গত বছরও চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তখন মৌখিক পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হতে পারিনি। কিন্তু আশা ছড়িনি। যখন আবেদন করেছিলাম তখন অনেকের কাছে অনেক কথাই শুনেছি। তদবির লাগে, টাকা লাগে। এসব ছাড়া চাকরি হয় না। আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। আমি টাকা দেবো কোথা থেকে। কিন্তু মনের জোরে এবং চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ স্যারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকায় আমি নির্বাচিত হয়েছি। এজন্য আমি চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ স্যার ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে কাঁদলেন তারা

শাহরাস্তি উপজেলার পিতৃহারা এবাইদুল হাসান মুন্না বলেন, আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের একজন সন্তান। আমরা দুই ভাই এক বোন। আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। আমাদের ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই। আমার বড় ভাই অসুস্থ। সংসার চালাতে গিয়ে আমরা খুব অভাব অনটনে আছি। আমি অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি এবং কনস্টেবল পদের জন্য আবেদন করি। মনের জোর ও পুলিশ সুপারের আন্তরিকতায় মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হতে পেরেছি। যা আমার জন্য একেবারেই স্বপ্নের মতো। আমার পক্ষে কাউকে ১০ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তারপরও আমার বিশ্বাস ছিল আমার যোগ্যতায় আমি চাকরি পাবো। সেই বিশ্বাসের জোরে আবেদন করেছি এবং নির্বাচিত হয়েছি।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিলন মাহমুদ জানান, কনস্টেবল নিয়োগে পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ স্যার আমাদেরকে যে সিস্টেম চালু করে দিয়েছেন তা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের কাছে তদবির বলেন আর টাকা-পয়সা দেওয়ার বিষয়ে বলেন এই সিস্টেমটি এসব প্রটেক্ট করতে সক্ষম। তারপরও আমাদের কাছে লোকাল কিছু তদবির আসে। তবে আমরা কোনো প্রকার তদবির তোয়াক্কা না করে যে সমস্ত প্রার্থীরা শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন, যারা সকল পরীক্ষায় ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছেন শুধু তাদেরকেই নির্বাচিত করেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনতানুর রহমান, কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজালুর রহমান, ডিআইও-১ মনিরুল ইসলাম, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস ও সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারীসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য সদস্য ও সাংবাদিকরা।