ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল ২০২৪ , বাংলা - 

ভোলার এক আতঙ্কের নাম স্বপন চেয়ারম্যান

চৌধুরী আনিসুর রহমানঃ

2022-03-29, 12.00 AM
ভোলার এক আতঙ্কের নাম স্বপন চেয়ারম্যান

ভোলার ত্রাস ও অদৃশ্য শক্তির নাম স্বপন চেয়ারম্যান। ভোলার চরে জেগে ওঠা সরকারী-বেসরকারি ২৬ হাজার ৯শ একর চর দখল করে নিয়েছেন এই চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক। দুদকের ভয়ে বেশির ভাগ এক্যাউন্টই করেছেন তার ভাই, বোন, ভাগিনা, ভাগ্নীদের নামে ও বেনামে। পাঁচ পর্বের তদন্ত প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।

ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতারুল হাসান (স্বপন) ও তার সিন্ডিকেটের দুর্নীতি-অনিয়ম, জুলুম নিপীড়ন ও নারী নির্যাতনের কাছে ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী হাজারো মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। সাংবাদিক পেটানো থেকে শুরু করে হেন অন্যায় নেই যে তিনি করেননা। স্বপন চেয়ারম্যানের ভয়ে ভোলার সাংবাদিকরাও নির্বিকার। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। গত ৪/৮/২০২১ ইং তারিখে ভোলার দুই সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম ও দাউদ ইব্রাহিমকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে দিনভর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে ওই দুই সাংবাদিককে প্রায় দুই মাস জেল খাটায় এই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান। বিচার দাবিতে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

হাজারো অন্যায়ের পর এক অদৃশ্য শক্তির দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন ৫৬ বছর বয়সী অবিবাহিত নারী লোভী এই চেয়ারম্যান। তার ছোট ভাই-বোন সবাই বিবাহ করলেও আজো তিনি বিয়ে করেননি। গ্রামের সুন্দরী মেয়েদের তলব, চাকুরী দেওয়ার নামে তরুণীদের জিম্মি করে তাদের সাথে যৌন মেলামেশা ও আমোদ প্রমোদসহ এমন কোন ছোট অপরাধও নেই যা তিনি করেন না। কিন্তু শত অন্যায় করেও তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন এক অদৃশ্য শক্তির জোড়ে।

তদন্ত সাপেক্ষে স্বপন চেয়ারম্যানের অপরাধের কিছু অংশের বর্ণনা এবং ভুক্তভোহীদের নাম ও ঠিকানা তুলে ধরা হলোঃ

বাগমারাসহ বিভিন্ন চরে ভূমি দখল ও বাণিজ্যঃ
 তেঁতুলিয়া নদী ভোলার শেষ সীমানা এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার অর্ন্তগত সীমান্তবর্তী নাজিরপুর  চরে ১৫শ একর, পাতাবুনিয়ার চর ২ হাজার একর জমি, ভাসান চর ৩ হাজার একর, কেরামনিয়া চর ১৭শ একর, গাজীর চর ১৭শ একর, ভেলুমিয়ার চর ৭শ একর, চর হোসেন ৪ হাজার একর, কেলাগাছিয়া চর ২ হাজার একর, ধুলিয়া চর ৮শ একর, রাবেয়ার চর ২ হাজার একর, বয়ার চর ১৮শ একর, তাবলীগের চর ১৫শ একর, ইউনুছ মিয়ার চর ২ হাজার একর, ট্যারগার চর ২২শ একর, পশ্চিমে বাউফলসহ জেগে ওঠা সরকারী-বেসরকারি প্রায় ২৬ হাজার ৯শ একর চর দখল করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এসব চর থেকে বছর প্রতি ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। শুধু সরকারী জমি-ই নয়, তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির উপরও খবরদারী করছেন। কৃষকদের থেকে টাকা নিয়েও ওই জমিতে চাষাবাদ করতে দিচ্ছেন না। চরের মধ্যে যারা গরু-মহিষ পালন করছে, তাদের কাছ থেকেও তিনি চাঁদা নিচ্ছেন। গরু মহিষের জন্য ঘাস নিতে হলেও তাকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা নিয়েও তিনি ক্ষ্যান্ত হন না, মাঝে মধ্যে কৃষকদের গরু-মহিষ ডাকাতি করে নিয়ে যান।

স্বপন চেয়ারম্যান এর চাকুরীর নামে অর্থ বাণিজ্য ও প্রতারণা ঃ
 স্বপন চেয়ারম্যান চাকুরীর নামে প্রায় শতাধিক যুবক যুবতির কাছ থেকে ৩ লাখ, ৫ লাখ, ৭ লাখ করে টাকা নিয়ে কাউাকে আর চাকুরী দেননি, টাকাও ফেরত দেয়নি। আবার অনেক সুন্দরী যুবতিদের চাকুরীর প্রলোভনে দিনের পর দিন তো ভোগ করে আসছেই।

 দক্ষিণ দিঘলদী ০১ নং ওয়ার্ডের টনি বাড়ীর ইসমাইল এর ছেলে নাজিম উদ্দিন লিংকন কে ঈদগাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন পদে চাকুরী দেওয়ার নামে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বপন চেয়ারম্যান। টাকার শোকে লিংকনের পিতা ইসমাইল মারা গিয়েছেন। লিংকনের মাতা শাহানাজ বেগম, ০১৭৫১১২৩১৪০৭।
 উত্তর দিঘলদী আওয়ামী লীগের নির্যাতিত কর্মী আজাদ এর স্ত্রী জান্নাত বেগম কে ফ্যামিলি প্লানের চাকুরী দেওয়ার নামে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বপন চেয়ারম্যান। আজাদ, মোবাইল নংঃ ০১৭২৫৪২১৯৫৪।
 দক্ষিণ দিঘলদী ৯ নং ওয়ার্ডের আবদুল হকের ছেলে মনিরকে হর্নি সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়ের পিয়ন পদে চাকুরী দেওয়ার নামে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবদুল হক, মোবাইল নংঃ ০১৭৫২২৪৯৯৩১৮।

 দক্ষিণ দিঘলদী ৭ নং ওয়ার্ডের নকুল এর ছেলে সাগর কে পুলিশের চাকুরী দেওয়ার নামে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকার শোকে নকুল স্ট্রক করে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। নকুল, মোবাইল নংঃ ০১৭১৮১৬১১১৩।

 ভেলুমিয়ার কবির এর ছেলে হাসান কে পুলিশে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে সেলিম মেম্বার এর মাধ্যমে ৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কবিরঃ ০১৭৪০-৭৭৫৮৪২।
 দক্ষিণ দিঘলদী ২ নং ওয়ার্ডের ফারুকের ছেলে এমদাদকে মধ্য পশ্চিম বালিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নিরাপত্তা কর্মী পদে চাকুরী দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চাকুরীও দেয়নি টাকাও ফেরত দেয়নি। সেখানে আয়া পদে রুমা বেগম এর কাছ থেকে ৩ লাখ এবং নিরপত্তাকর্মী পদে রায়হান কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক ওই পদে কোড়ালিয়া দাখিল মাদ্রাসায় রাকিব ও শাহানাজ এর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নিয়ে তাদেরকে ঐ পদে নিয়োগ দেওয়া  হয়েছে।