ব্যাংকসহ খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যে গবেষণা, বীজ উৎপাদনে এমনকি সরকারি বাস চলাচলেও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাঁধা এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এক সময় যারা সরকারে ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা যাই পরামর্শ দিতো তাই মেনে নিতো বলেও তিনি জানান।সোমবার (১৪ মার্চ) রাতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মুল উদ্দীপক স্লোগান ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন ব্যাংক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর পর থেকে বাংলাদেশের কি অবস্থা ছিল। বিশ্ব যখন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে। বাংলাদেশ মানে অন্যের কাছে ভিক্ষা চেয়ে খাদ্য সংগ্রহ করা, দুর্ভিক্ষ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি। বিশ্বের কাছে মাথা নিচু করে চলা। এরপর ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করতে সুযোগ পেয়েছি। সরকারে আসার পরই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল সেই হারানো গৌরব আবার ফিরে আনা। অর্থনৈতিকভাবে দেশ যাতে উন্নত হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া। বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান দিয়ে গেছেন তাতে স্পষ্ট লেখা আছে সরকারি খাতও থাকবে, কো-অপারেটিভ থাকবে, বেসরকারি খাতও থাকবে। কিন্তু জাতির পিতা হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা কি করেছে সে রকম কোনো তো করতে পারেনি। আমি সরকারে আসার পর থেকেই সব থেকে আগে যে কাজটা করেছি প্রতিটি ক্ষেত্রকে আমি বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আজ যতগুলি ব্যবসা বেসরকারি খাতে এসেছে, যখন আমি ব্যাপকভাবে ব্যাংক করতে শুরু করলাম বা ব্যাংক বীমা বেসরকারি খাতে অনেক বাধা এসেছে, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে বাংলাদেশে এতো বেসরকারি ব্যাংক দিয়ে কি হবে। ব্যাংক তো লাভজনক হয় না। বরং সরকারি ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে দেওয়া হবে এ ধরণেরও পরামর্শ কিন্তু বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বা খাদ্যে গবেষণা করা, বীজ উৎপাদন সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমাদের সরকারি বাস চলাচল করবে সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে। আর তখন যারা সরকারে ছিল তারা এতই দুর্বল ছিল যে ওই আন্তর্জাতিক সংস্থা যাই পরামর্শ দিতো তাই তারা মেনে নিতো। কিন্তু নিজেদের যে একটা উদ্যোগ থাকবে, চিন্তা-চেতনা থাকবে, পরিকল্পনা থাকবে সেটা কিন্তু ছিল না। কিন্তু আমি সরকারে আসার পর থেকে কিন্তু আমি ওসমস্ত পরামর্শ শুনি নাই। আমি শুধু একটা কথা বলেছি দেশ আমাদের, আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি এদেশের মানুষের মঙ্গল কিসে হবে সেটা আমরা সব থেকে ভালো করে জানি। কোনো একটা সংস্থা দুই একটা অফিসার এসে কি বলবে, তারা আমাদের দেশকে কতটুকু চেনে, কতটুকু বোঝে, কতটুকু জানে যে এদেশের মানুষের কল্যাণ কিসে হবে। যেটায় এদেশের মানুষের মঙ্গল সেটাই আমরা করবো। আজকে ব্যাংক, বীমা, বেসরকারি প্লেন, টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ফোন সকলের হাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। যা ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। আপনারা যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, শিল্প কলকারখানা করেন আপনাদের আমি এও বলেছি আপনার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হবে। কতটুকু আমরা বিদেশে রফতানি করতে পারবো আবার নিজের দেশে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আর বাজার সৃষ্টি করতে হরে আমার দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেই ক্রয় ক্ষমতা আমি তখনই বাড়াতে পারবো যখন এদেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে, ক্রয় করবার মতো একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক শক্তিটা সে অর্জন করতে পারবে তখনই আমরা নিজ দেশে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ সময় তিনি গৃহহীনদের দেওয়া ঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসের কথা তুলে ধরে বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে এতে লাভবান কারা হচ্ছে, আমাদের ব্যবসায়ীরা হচ্ছে। আপনাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত হচ্ছে না, সেটা তো ব্যাপকভাবে বাজারজাত হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। বেসরকারি ব্যাংক-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাকে সরাসরি বলেছিল এতগুলি ব্যাংক দিয়ে কি হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি তো অত্যন্ত ছোট। আমি বলেছি ছোটই যে থাকবে তা তো না, বড় হবে এবং আমরা বড় করবো।
জয় বাংলা স্লোগান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জয় বাংলা স্লোগান আমাদের বিজয়ের স্লোগান। যে স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমি তখন ছাত্রলীগের একজন কর্মী, বঙ্গবন্ধু আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন জয় বাংলা স্লোগানটা মাঠে নিয়ে যেতে মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন সে ভাষণে তিনি মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন, একদিকে স্বাধীনতার কথা বলেছেন অপর দিকে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। জয় বাংলা স্লোগান দিয়েই তিনি তার সেই ভাষণ শেষ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে এই স্লোগান এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতার চেতনায়। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা শত্রু মোকাবিলা করতো এই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। যে স্লোগান এদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সেই স্লোগান ৭৫ এর নিষিদ্ধ হয়ে গেল। যে স্লোগান মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে এতো শক্তি দিয়েছিল যে তারা শত্রুকে মোকাবিলা করতে একটুও দ্বিধা করেনি। সেই জয় বাংলা স্লোগান দিতে গিয়ে আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজ আমি ধন্যবাদ জানাই যে জয় বাংলা স্লোগান আজকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বীকৃতি পাওয়া পর এগিয়ে এলেন ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে ব্যাংক এ্যাসোসিয়েশন। এই জয় বাংলার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বে মানুষের কাছে বলতে চাই আমরা বিজয়ী জাতি। মাথা নত করে চলি না, চলবো না। আজকে আমি বেশি খুশী হতাম যদি আমার বোন রেহানা পাশে থাকতো। কারণ আমরা দুটি বোনই বেঁচে ছিলাম, ও আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। কিন্তু ও না থাকলে আমি এতো দুর এগিয়ে আসতে পারতাম না। সে আমার একটা বড় শক্তি। কাজেই আমরা দুই জন আজকে সব থেকে আনন্দিত যে এই জয় বাংলা স্লোগান, যে স্লোগান এ দেশের মানুষকে নিরে জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে বিজয় অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। যে স্লোগান দিয়ে এদেশের মানুষ রক্তের অক্ষরে লিখে গেছে আমি বিজয় আনতে চাই। এ জয় বাংলা আমাদের সকলের।