বাইশ বছর আগের কথা। ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাসে মহাকাশে, পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হয় মানুষের বসবাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’ (আইএসএস)-কে। এর পর দু’দশকের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এই প্রথম আইএসএস-এ যাবেন কোনও কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা মহাকাশচারী। নাম জেসিকা ওয়াটকিন্স। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা আজ ঘোষণা করেছে, আগামী বছর এপ্রিল মাসে স্পেসএক্স ক্রু-৪ মিশনের অন্যতম অভিযাত্রী জেসিকা।
মহাকাশে অবশ্য আগেও পা ফেলেছেন কোনও কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। ১৯৯২ সালে স্পেস শাটল এনডেভারে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন প্রথম আমেরিকান-আফ্রিকান মহিলা মে জেমিসন। ছয় সহযাত্রীর সঙ্গে এনডেভার মহাকাশযানে পৃথিবীকে ১২৬ বার প্রদক্ষিণ করেছিলেন মে। মহাকাশে কাটিয়েছিলেন ১৯০ ঘণ্টা। তবে নারী-পুরুষ মিলিয়েও কৃষ্ণাঙ্গ নভশ্চরের সংখ্যা নেহাতই কম। ১৯৯৫ সালে প্রথম মহাকাশে পা রাখেন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ অভিযাত্রী বার্নার্ড হ্যারিস জুনিয়র। ২০২০ সালের নভেম্বরে মহাকাশে যান ভিক্টর গ্লোভার জুনিয়র। তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, যিনি দীর্ঘসময়ের জন্য আইএসএসে থেকেছিলেন।
২০১৬ সালে সাড়া ফেলে দিয়েছিল নাসার তিন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা বিজ্ঞানীর বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়ার কাহিনি। তাঁদের জীবন নিয়ে ওই বছর তৈরি হয়েছিল ফিল্ম ‘হিডেন ফিগারস’। ওই নামে মার্গট লি শ্যাটেরলি-র একটি বই থেকে ফিল্মটি তৈরি হয় হলিউডে। নাসার তিন কৃষ্ণাঙ্গ গণিতজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ার ক্যাথরিন জনসন, ডরোথি ভন এবং মেরি জ্যাকসনকে কী ভাবে লিঙ্গ ও বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়েছিল, তাই দেখানো হয় ছবিতে। বেশি দিন আগের কথা নয়, নাসার প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার মেরি জ্যাকসনকে সম্মান জানিয়ে ২০২০ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে নাসার সদর দফতরের নাম মেরির নামে রাখা হয়। এর দু’বছরের মাথায় এ বারে মহাকাশ স্টেশনে যাবেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। ২০১৭ সালে নাসার পরীক্ষায় মহাকাশচারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন জেসিকা। তার পর থেকে তাঁর প্রশিক্ষণ চলছে। জেসিকার সঙ্গে ওই অভিযাত্রী দলে থাকবেন নাসার জেল লিন্ডগ্রেন ও রবার্ট হাইনস এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেট্টি। এলন মাস্কের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযান তাঁদের পৌঁছে দেবে স্পেস স্টেশনে। এই নিয়ে পর্যায়ক্রমে চার বার মহাকাশে যাত্রীদের পৌঁছে দেবে যানটি। ফ্লরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটে করে স্পেসএক্সের ক্যাপসুলে চেপে রওনা দেবেন চার জন। ছ’মাসের জন্য মহাকাশই হবে তাঁদের ঠিকানা। ক্যালিফর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলজিক্যাল ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স নিয়ে স্নাতক হন জেসিকা। তার পরে ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলজিতে স্নাতকোত্তর। নাসার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। এক সময়ে ইনটার্ন হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন নাসায়। পরবর্তী কালে নাসার এমস রিসার্চ সেন্টার এবং জেট প্রোপালসন ল্যাবে কাজ করেছেন তিনি। নাসার মঙ্গলযান কিউরিওসিটি-র অভিযানেও যুক্ত ছিলেন জেসিকা। বলেন, ‘‘জিওলজি পড়তে গিয়েই ভিন্ গ্রহের গঠন নিয়ে গবেষণার উৎসাহ জাগে। বিশেষ করে মঙ্গল নিয়ে। ওটা আমার প্যাশন।’’
২০২২-এর মহাকাশ যাত্রার অভিযাত্রীদের নাম ঘোষণা হতেই জেসিকাকে অভিনন্দন জানান সহকর্মীরা। নাসার বিজ্ঞানী ক্যাথি লুডার্সও টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মহাকাশচারী জনি কিম বলেন, ‘‘মহাকাশে আরও এক ঝাঁক! জেসিকা ওয়াটকিন্সকে অভিনন্দন। স্পেসএক্স ক্রু-৪ অভিযানে অসাধারণ কিছু করে দেখাবে ও।’’