ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

পূজামণ্ডপে কোরআন,তদন্ত কমিটি,শহরে বিজিবি

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-10-13, 12.00 AM
পূজামণ্ডপে কোরআন,তদন্ত কমিটি,শহরে বিজিবি

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছেন পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার তথ্য তারা পেয়েছিলেন জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ এর মাধ্যমে এবং এ ঘটনার জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‍্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে শহরে।মিস্টার হাসান বলেন ঘটনার পর আর কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। "আর কোথাও কোন হামলা বা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ," বিবিসি বাংলাকে বিকেলে বলছিলেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় শহরে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। আর পুলিশ বলছে তারা সন্দেহভাজন অন্তত দশ জনকে আটক করেছে।

ওদিকে পূজামণ্ডপ থেকে কোরআন পাওয়ার ঘটনার পর কুমিল্লার বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পূজা উদযাপন কমিটির সম্পাদক নির্মল পাল।তিনি বলেন শহরের নানুয়ারদীঘি এলাকার একটি পূজামণ্ডপের প্রতিমায় কোরআন রাখার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ গিয়ে তা সরিয়ে নেয়। কিন্তু এর পর পরই একদল ব্যক্তি বেশ কিছু পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা চালায়।

কি ঘটেছিলো পূজামণ্ডপে?

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন খুব ভোরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর আসে যে নানুয়ারদীঘির পূজামণ্ডপের ভেতরে প্রতিমার পায়ের কাছে একটি কোরআন রাখা আছে।

খবর পেয়েই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।

পুলিশ সেখান থেকে কোরআন নিয়ে আসেন।

কিন্তু দশটা নাগাদ একটি ছবি ব্যাপক ভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে থাকে যেখানে দেখা যায় প্রতিমার হাঁটুর কাছে কোরআন।

অনেকে এটি দিয়ে নানা ধরণের লাইভ বক্তব্য দিয়ে কোরআন অবমাননার অভিযোগ করতে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বিবিসিকে বলেছেন বেলা এগারটার দিকে হঠাৎ কোরআন অবমাননা হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে শহর জুড়ে।তিনি বলেন সকালে নানুয়ারদীঘির মণ্ডপে কোরআন নজরে পড়লে দ্রুত পুলিশকে জানানো হয় এবং পুলিশ তখনি এসে কোরআনটি সরিয়ে নেয়।

"কিন্তু খবরটি খুব দ্রুত ছড়ানো হয় এবং কয়েকটি মাদ্রাসার লোকজন ছাড়াও স্থানীয় অনেকে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে সেখান থেকে মণ্ডপ গুলোতে হামলা করা শুরু হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়"।

তিনি বলেন কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেলেও সেগুলো কোথায় হয়েছে তা বোঝা যায়নি।

এদিকে ঘটনার পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোরআন অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং অনেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনেকে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন।

প্রসঙ্গত, বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায় এখন তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছে।পূজা উদযাপন পরিষদ যা বলছে

পূজা উদযাপন পরিষদের কুমিল্লা জেলা ইউনিটের সম্পাদক নির্মল পাল বলছেন খুব ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে।

"পূজা বানচালের জন্য পরিকল্পিতভাবে কোরআন রেখে এ ঘটনা ঘটিয়ে তারাই এখন শহরজুড়ে পূজাবিরোধী বিক্ষোভ করছে। কয়েকটি মণ্ডপে হামলার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু পুলিশের বাধায় ভেতরে ঢুকতে না পারলেও গেইট বা সামনের স্থাপনা ভাংচুর করেছে," বলছিলেন তিনি।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লায় অনেকগুলো পূজামণ্ডপে উৎসব চলছিলো। কিন্তু আজ যেই মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে প্রতিমা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপকেরা জানিয়েছেন পূজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিসর্জন দিয়ে দিয়েছেন।

ওদিকে বিকেলে আরও একটি মন্দির এলাকায় পূজাবিরোধী মিছিলকারীদের সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের একদল ব্যক্তির সংঘর্ষেরও খবর পাওয়া গেছে।যদিও জেলা প্রশাসক বলেছেন এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

কুমিল্লার সর্বশেষ অবস্থা কেমন

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানিয়েছেন শহরের পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে এবং সেটি শান্তিপূর্ণ।

"পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেক ভুল তথ্য গেছে। কোথাও আর কোন হামলা বা ভাংচুর হয়নি," বলছিলেন তিনি।

কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন মন্দিরগুলোকে ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে পুলিশী নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা বলছেন যারা পূজাবিরোধী মিছিল শ্লোগান দিয়েছে তাদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজনও যোগ দেয়াতে পরিস্থিতি কখন কোন দিকে গড়ায় সেটি তারা নিশ্চিত নন

মন্দিরে কোরআন রেখেছে কারা

পুলিশ বা জেলা প্রশাসন বলছে কারা ঘটিয়েছে সেটি জানতে তারা তদন্ত শুরু করেছে ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলছেন , "কোরআন পূজামণ্ডপে কারা রেখেছে সেটি তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কমিটি করেছি এবং পুলিশও আলাদা তদন্ত করছে। এজেন্সিগুলো থেকেও তথ্য নিচ্ছি।আশা করি যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করতে পারবো"।

তিনি বলেন, "তদন্ত না করে বলা যাবে না। এটার বিভিন্ন গ্রুপ থাকতে পারে। এখন সন্দেহের ওপর বলা ঠিক হবেনা। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটেরে নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে জানাবে। পুলিশও আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছি। এখন চাচ্ছি শহর শান্তিপূর্ণ থাকুক। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আমরা বুঝতে পারবো। আমরা আশাবাদী যে আমরা চিহ্নিত করতে পারবো"।

তবে বাস্তবতা হলো এর আগে কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গত ডিসেম্বরেই জেলার মুরাদনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। কিন্তু কারা এর পেছনে থাকে সেটি আর শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। জেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক নির্মল পাল বলছেন কারা এগুলো ঘটনায় সেটি কখনোই জানা যায় না।

তিনি বলেন আজকের ঘটনার পরেও কিছু মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সমাবেশ গুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজনকেও অংশ নিতে দেখেছেন তারা।

"কওমি মাদ্রাসার লোকেরা আর যখন যখন ঘটনা ঘটে তখন কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, জাসদ, বাসদ কিছু নেই, সব সমান- সাইজ করে দাও। পরিস্থিতি বেশি ভালো নয়"।

তিনি বলেন ঘটনার পর পুলিশ বেশ সক্রিয় হয়েছে কিন্তু এর বাইরে আর কোন মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

একই ভাবে জেলার রাজনৈতিক নেতাদের বেশ কয়েকজনের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলেও তারাও কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভুঁইয়া অবশ্য বলছেন মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তার নানা আয়োজন ছিলো তাই কারা কোরআন রাখার কাজটি করেছে সেটি প্রশাসন চাইলে সহজেই বের করা সম্ভব।" কুমিল্লায় এমন ঘটনা তো নতুন নয়। মামলাও হয়েছে আগে। কিন্তু কারা আগে ঘটিয়েছে সেটি তো পুলিশ বের করতে পারেনি। সাধারণত দুর্গাপূজার সময় কড়া নিরাপত্তা থাকে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন থাকে। তার মধ্যে কিভাবে ঘটলো সেটা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। এবং সে ধরণের উদাহরণ তৈরি হলে যে বিচার হচ্ছে বা কারা করছে ধরা হচ্ছে সেটি হলেই এগুলো কমবে"।

কারা কিভাবে এগুলো ঘটায় সে সম্পর্কে কেউ কোন তথ্য না দিতে পারলেও আজকের ঘটনাকে ঘিরে সারাদেশেই স্থানীয়ভাবে পূজামণ্ডপগুলোকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বিশেষ করে কুমিল্লা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোকে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। বিবিসি’র সৌজন্য।