উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন এক "অপরাজেয় সামরিক বাহিনী" গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছেন। বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুভাবাপন্ন নীতির কারণেই এই বাহিনী গড়ে তোলা হবে।রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে কিম জং-আন বলেছেন কোন যুদ্ধ শুরু করার জন্য নয়, আত্ম-রক্ষার্থেই তার দেশ অস্ত্র তৈরি করছে।বিরল এক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে মি. কিম এসব মন্তব্য করেছেন। এসময় তার চারপাশে সজ্জিত ছিল নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র।
উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এর মধ্যে কোন কোনটিকে তারা হাইপারসনিক এবং বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বলেও দাবী করছে।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও সম্প্রতি সাবমেরিন থেকে অস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষা চালিয়েছে।'আত্ম-প্রতিরক্ষা ২০২১' প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয়েছে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়াং-এ। সেখানে দেওয়া ভাষণে মি. কিম বলেন, উত্তর কোরিয়া তার প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না।
"আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছি না, কথা বলছি যুদ্ধ ঠেকানোর জন্য। জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধ-প্রতিরোধী ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধি করছি," বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে তারা উত্তেজনা তৈরি করছে।
মি. কিম বলেন, উত্তর কোরিয়া বিশ্বাস করে না যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবারই বলেছেন যে তারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী। তবে ওয়াশিংটনের দাবি উত্তর কোরিয়াকে তাদের পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এই দাবিতে কান দিচ্ছে না উত্তর কোরিয়া।প্রদর্শনীতে ভাষণ দেওয়ার সময় মি. কিমের চারপাশে সজ্জিত ছিল ট্যাঙ্কসহ নানা ধরনের সামরিক অস্ত্র।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সউল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা লরা বিকার বলছেন, কিম জং-আন তার নতুন সামরিক শক্তি নিয়ে শুধু কথাই বলেন না, তিনি সেই শক্তি প্রদর্শনও করেছেন।
লরা বিকার জানিয়েছেন, এই প্রদর্শনী ছিল সামরিক প্যারেডের সমতুল্য। মি. কিম ক্ষমতা গ্রহণের পর এধরনের প্রদর্শনী কখনো দেখা যায়নি।
"তাকে ঘিরে সজ্জিত ছিল আন্ত-মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক ইউনিফর্ম পরিহিত তার কিছু প্রতিকৃতি। মি. কিম বলেছেন, এসব ক্ষেপণাস্ত্র স্পর্শ করে তিনি প্রচণ্ড গর্ব অনুভব করছেন," বলেন লরা বিকার।
কিম জং-আন বলেছেন, তার আরো যেসব অস্ত্র তৈরির ইচ্ছা রয়েছে সেগুলো তৈরি কাজও অব্যাহত থাকবে।বিবিসির সংবাদদাতা লরা বিকার বলছেন, যারা কিম জং-আনের অস্ত্র কর্মসূচির সমালোচনা করেন তাদেরকে তিনি এভাবেই জবাব দিয়ে থাকেন। তিনি মনে করেন সউলের মতো পিয়ংইয়াং-এরও অধিকার রয়েছে সামরিক বাহিনী তৈরি করার।
কয়েকদিন আগে তিনি তার কর্মকর্তাদের আদেশ দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার জনগণের জীবন আরো উন্নত করার বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য। লরা বিকার বলছেন, উত্তর কোরিয়ায় যে ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে, তার মধ্যে সীমিত তহবিল ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ভেতরে কিম জং-আন কি আসলেই একটা "অপরাজেয় সামরিক বাহিনী" গড়ে তুলতে পারবেন এবং তার জনগণকে সাহায্য করতে পারবেন? যদি করেন তাহলে তিনি কোনটা করবেন- সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে দেশটি বারবারই তাদের অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। একারণে দেশটির ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা গত মাসে বলেছে যে উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু চুল্লী পুনরায় চালু করেছে। এর ফলে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করতে পারবে যেটা আন্তর্জাতিক বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ।