মুসলমানদের ‘শুয়োর’ এবং ‘কুকুর’-এর সঙ্গে তুলনা করে অসংখ্য অমানবিক পোস্ট ছিল ফেসবুকে। সেসব পোস্ট সরানো হয়নি বলে অভিযোগ ফেসবুকের হুইসেলব্লোয়ার ফ্রান্সিস হাউজেনের। সম্প্রতি হাউজেন মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে এ সম্পর্কিত একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট পেশ করেছেন। যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মপ্রক্রিয়ার ভেতরে থেকে দুর্নীতি অথবা অনিয়মের খবর ফাঁস করে দেন, তাদের হুইসেলব্লোয়ার বলা হয়। ফ্রান্সিস হাউজেন এমনই এক হুইসেলব্লোয়ার। তিনি ফেসবুকে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসাবে যুক্ত ছিলেন এবং সিভিক ইনটিগ্রিটি বিষয়ে কাজ করতেন।
সম্প্রতি তার ফাঁস করা তথ্যে জানা যায়, প্ল্যাটফর্মটি ঘৃণা, সহিংসতা ও ভুল তথ্য ছড়াতে ব্যবহৃত হয়। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এটা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভালো করেই জানে, কিন্তু তারা প্রমাণ গোপন করার চেষ্টা করেছে।
২০১৯ সালে ফেসবুকে যোগ দেন ফ্রান্সিস হাউজেন। এর আগে গুগল ও পিন্টারেস্টের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ফেসবুক নিয়ে সাক্ষ্য দিতে মার্কিন সিনেটের কনজুমার প্রোটেকশন, প্রোডাক্ট সেফটি অ্যান্ড ডেটা সিকিউরিটি সাবকমিটির সামনে হাজির হন এ হুইসেলব্লোয়ার।
হাউজেনের অভিযোগের পক্ষে যেসব অভ্যন্তরীণ নথি জমা দেওয়া হয়েছে, সেখানে উল্লেখ আছে, ফেসবুক কীভাবে (ভারতের) আরএসএস পরিচালিত অ্যাকাউন্টগুলোর পোস্ট প্রোমোট করেছে।
হাউজেন বলেন, ‘আরএসএস কর্মীদের পেজগুলো ভীতি প্রদর্শনকারী ও মুসলিমবিরোধী কনটেন্টপূর্ণ। তাদের অনেকের পোস্টে মুসলমানদের ‘শুয়োর’ এবং ‘কুকুর’-এর সঙ্গে তুলনা করে অসংখ্য অমানবিক পোস্ট রয়েছে। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এসব কন্টেন্ট মডারেট করার কেউ ছিল না বলে অভিযোগ হাউজেনের।
হাউজেনের দাবি, ভারতে বাংলা ভাষার কনটেন্টগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য বাঙালি মডারেটরের ঘাটতি ছিল। দাবি করা হয়েছে, ঘৃণামূলক কনটেন্টের মাত্র ০.২ শতাংশ পোস্ট সরানো হয় ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেমের দ্বারা। মুসলিমবিরোধী পোস্টকে প্রায় কখনও ‘ফ্ল্যাগ’ করা হয়নি ফেসবুকে।
গত মে মাসে ফেসবুকের চাকরি ছাড়েন তিনি। হাউজেন বলেন, ‘ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামকে নিরাপদ করার উপায় ভালো করেই জানে সংস্থাটি। কিন্তু প্রয়োজনীয় সেসব পরিবর্তন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আনতে চায় না। কারণ তারা (ফেসবুক) মানুষের নিরাপত্তার আগে ব্যবসায়িক লাভকে বেশি প্রাধান্য দেয়।’