তখন অক্সিজেনের অভাবে অনেকেরই প্রাণসংশয়। অজানা এই সংক্রামক জীবাণুর সঙ্গে অভূতপূর্ব যুদ্ধে মানুষ দিশেহারা, সন্ত্রস্ত। শহরে কেবল অ্যাম্বুল্যান্সের শব্দ ও হাহাকার। করোনার এক ঢেউ সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় যখন নাজেহাল পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা ভারত, তখন অতন্দ্র প্রহরীর মতো নীরবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিছু মানুষ। স্পর্শ যখন নিষিদ্ধ, সেই আকালেও হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রোগীর সাহায্যে, প্রয়োজনে। তেমনই একজন হলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী শ্রাবস্তী ঘোষ। সম্প্রতি সেই নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতি পেলেন একটি রং প্রস্তুতকারক সংস্থা থেকে।
শ্রাবস্তী ব্যক্তিগত উদ্যোগেই করোনা-আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে নিজের হাতে রান্না করে সাধ্য মতো খাবার পৌঁছে দিয়েছেন ঘরে ঘরে। জীবনানন্দের বনলতার সৌন্দর্যে ছিল শ্রাবস্তীর কারুকাজ। একবিংশ শতকের এই শ্রাবস্তীর রন্ধনশিল্পের কারুকাজ মুগ্ধ করেছিল অনেককেই। সেই কাজের সম্মানে এ বারের পুজোয় একটি রং প্রস্তুতকারক সংস্থার উদ্যোগে নিজের নামে একটি নতুন রং উপহার পেলেন তিনি। কোভিডের সময়ে শ্রাবস্তীর মতো যাঁরা প্রাণপাত করেছেন অন্যদের প্রাণ রক্ষার্থে, তেমন পাঁচ জনের নামে পাঁচটি নতুন রং এনেছে এই সংস্থা। শ্রাবস্তীর নাম জুড়েছে হলুদের একটি নতুন শেডে।এই উপহারের খবর তিনি ফোনেই প্রথম পান। খবর আসে অগস্ট মাসে। তার পর অক্টোবরে রঙটি আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজারে আসে। কেমন লেগেছিল প্রথম ফোন পেয়ে? আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্রাবস্তী জানালেন, ‘‘বিস্মিত হয়েছিলাম, তবে অভিভূতও যে হয়েছিলাম তা বলাই বাহুল্য। আসলে যখন কাজটা শুরু করি তখন এত কিছু ভাবিনি। ভাবিইনি যে এত মানুষের ভালবাসা পাব, এত বড় মঞ্চ থেকেও আসবে স্বীকৃতি।’’ এর আগে একটি জীবাণুনাশক সংস্থা থেকেও স্বীকৃতি পান তিনি।
শ্রাবস্তী একজন পেশাদার শিল্পী। এর আগে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের বিভিন্ন ম়ঞ্চেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। আবার করোনাকালে বহু অচেনা মানুষের বাড়িতে রান্না পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। একা হাতেই সামলেছেন সেই দায়িত্ব। আর তারই স্বীকৃতি মিলল এ বার।