ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে সংবিধানে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই আইন আর করেনি কোনো সরকারই। তাই পাঁচ বছর পরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় এলেই আলোচনায় আসে বিষয়টি। ২০১২ সাল থেকে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করছেন রাষ্ট্রপতি। তার আগেও ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর এ নিয়ে সুশীল সমাজ থেকে একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে বারবার। তবে সে দাবি উড়িয়ে না দিলেও রাজনৈতিক দলগুলো কখনো জোর আওয়াজও তোলেনি।
সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। সেখানে ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—“প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন। একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাহার সভাপতিরূপে কার্য করিবেন। এই সংবিধানের বিধানাবলি-সাপেক্ষে কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাঁহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরকাল হইবে। ”
এ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনেক কথা বলেছি। এগুলো বলে তো কোনো লাভ নেই। বিবৃতি দিয়েছি, যা বলার বলে দিয়েছি। বলেই আর কী হবে, সরকার তো বলে দিয়েছে। আমরা কী করতে হবে, তাও তো বলেছি। নতুন কিছু বলার নেই। এগুলো এত গতানুগতিক বিষয় হয়ে গেছে যে, বলারও কোনো আগ্রহ নেই। এগুলো বলেই কী হবে আর নিউজ করেই কী করবেন? এগুলোর কোনো তরক্কি নেই, উন্নতি নেই। কিছু হচ্ছে না তো। কেউ কিছু শুনছে না তো। এভাবেই চলছে। ইলেকশন ‘গন’। আমাদের জীবদ্দশায় আর নির্বাচন দেখবো না তো!
তিনি আরও বলেন, নতুন করে (নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া) আবিষ্কার করার কিছু নেই। দুনিয়ার প্রত্যেকটা দেশে (আইন) আছে। আমাদের দেশেও করবে। কিন্তু আমরা করছি না। এগুলো বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেল! আর বলতে চাই না এগুলো নিয়ে। সংবিধান অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না তো।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটা আইন প্রণয়নের কথা, যার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার কথা। এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। গত ৫০ বছরে এ ব্যাপারে কোনো আইন করা হয়নি। আমরা মনে করি যে, একটা আইন করা দরকার। এই মাধ্যমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা দরকার। যাতে একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। কেননা, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। এই তৎপরতা শুরু করতে হবে একটা নিরপেক্ষ, শক্তিশালী, কার্যকরী নির্বাচন কমিশন নিয়োগের মাধ্যমে। এই নিয়ে একটা আইন করা দরকার। আমরা ৫৪ জন নাগরিক এজন্য দাবি করেছি। আশাকরি, সরকার এগিয়ে আসবে। রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সরকারের তো উদ্যেগ নিতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ (সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১২ সালে নিয়োগ) বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এখন ওখানে (সংবিধানে) বলছে আইন অনুসারে। তো, আইন আসলে নাই কিছু। আমাদের দেশে ৫০ বছরে কোনো আইন হয়নি। কিন্তু আইন অনুসারে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা। কিন্তু নিয়োগ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি আরও বলেন, এখন আইন অনুসারে দিলে হয়তো কিছু একটা আইন করবে। কিন্তু আইন এখন... আমার কথা হলো, যেহেতু সংবিধানে আইন করার কথা বলা আছে, সেহেতু আইনটা করা উচিত। তবে আইন না করার ফলে যে খুব ক্ষতি হয়ে গেছে, আমি তা বলবো না। এজন্য যে, যারা নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন, তারা তাদের দায়িত্ব পালন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই করেন। সহযোগিতা সবসময় পান না বলে অনেকেই অনেক সময় ডিফেন্ড হয়। আইনটা করলে ভালো হতো। আইন না করাতে যে বিরাট অসুবিধা হয়ে গেছে, এতে যে খুব খারাপ কিছু হয়েছে, এটা বলা যাবে না। তবে আইন করা উচিত।