ঢাকা: বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে। এর আগেই গঠন হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। সরকারি দল বলছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। অপরদিকে বিএনপি আপাতত নির্বাচন কমিশন নিয়ে ভাবছে না। তাদের দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন যতই পুনর্গঠন হোক নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে মনে করছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশন নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো কথা বলবো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারবে না, এটা আমরা বলে দিয়েছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ওনারা যা খুশি করুক।
পাঁচ বছর আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে নাম প্রস্তাব করেছিল। এবার আপনারা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, না, এবার আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো কথা বলবো না।
তাহলে নির্বাচন কমিশন নয়, আপনাদের প্রথম দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার—এমন প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ সূচক মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। দলীয়ভাবে মহাসচিব যে বক্তব্য দেবেন সেটাই আমার বক্তব্য।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা কোনো নির্বাচন কমিশনের মধ্যে নেই। এই সরকার যাবে, তারপর নির্বাচন কমিশন নিয়ে চিন্তা করবো।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে যদি পৃথিবীর সেরা পাঁচজন মানুষকেও দেওয়া হয় তাতে লাভ কী? দুষ্ট প্রকৃতির স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কোনো ভালো জিনিসকে ভালো বানালে সেটাকেও তারা নষ্ট করে ফেলবে। সুতরাং যারা নষ্ট তাদের আগে সরে যেতে হবে। তারপরে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা।
তাহলে আপনাদের প্রথম দাবি কী? জবাবে আলাল বলেন, আমাদের দাবি নিরপেক্ষ অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। সেটা তত্ত্বাবধায়ক হোক আর নিরপেক্ষ অন্তর্র্বতীকালীন হোক, আমরা আগে চাই এই সরকারের বিদায়।
সবশেষ ২০১৭ সালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এ কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নাম চূড়ান্ত করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপেও বসেছিল তারা। যদিও ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলে দাবি করেছিল বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান চাই। তবে এর আগে নিরপেক্ষ সরকার চাই। নিরপেক্ষ সরকারের আগে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই, কারণ সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে তাতে আওয়ামী কমিশন হয়, গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন কমিশন হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো—সরকার তাদের উদ্দেশ্যপূর্ণ রাজনৈতিক অভিলাষে নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন এখন বাংলাদেশে দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানাবো।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আরও বলেন, এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষ হোক, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সেজন্য আমরা এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি।
এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যেহেতু দেশের এক নম্বর ব্যক্তি, তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। কিন্তু সেই বৈঠক ব্যর্থ হয়। আমাদের আবেদন, প্রস্তাব সব বিফলে গেছে। কারণ রাষ্ট্রপতি সরকারের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।