স্বীকৃতির প্রশ্ন এখনো ঝুলে রয়েছে। তবু ভারতের সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার আগ্রহী। এই মর্মে ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে তারা চিঠি দিয়েছে। ভারত অবশ্য এখনো এই বিষয়ে হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি।
ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) অরুণ কুমারকে এই চিঠি লিখেছেন আফগানিস্তানের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হামিদুল্লাহ আখুন্দজাদা। ৭ সেপ্টেম্বর লেখা সেই চিঠিতে তিনি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে বন্ধ থাকা বিমান চলাচল আবার শুরু করতে তাঁরা আগ্রহী। দিল্লি ও কাবুলের মধ্যে আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইন ও ক্যাম এয়ারকে বিমান চালাতে অনুমতি দেওয়া হোক।
তিনি এ কথাও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী দেশত্যাগের আগে বিমানবন্দরটি অকেজো করে দিয়েছিল। কাতারের সহায়তায় সেটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়েছে। এখন আগের বোঝাপড়া অনুযায়ী দিল্লি-কাবুল বিমান পরিবহন শুরু করা যেতে পারে।
তালেবানের আক্রমণে কাবুলের পতন হয়েছিল ১৫ আগস্ট। সেই থেকে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বিমান পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। ৩১ আগস্ট কাতারের রাজধানী দোহায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তলের সঙ্গে তালেবান মুখপাত্র মহম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাইয়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছিল। সরকার গঠনের পর তালেবানের সঙ্গে আজ পর্যন্ত ভারতের আর কোনো বৈঠকও হয়নি। তালেবান সরকারকে সার্কের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পাকিস্তানের প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে ভারত।
ভারত এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে যথেষ্ট আড়ষ্ট। ভারত চায়, স্বীকৃতি দানের আগে তালেবানরা বিশ্বের বিভিন্ন শক্তির চাহিদা মেনে নিক। সরকারের চরিত্র প্রতিনিধিত্বমূলক হোক। সব সম্প্রদায় তাতে অংশ নিক। ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। মানবাধিকার রক্ষায় শাসকেরা যতœবান হোক। নারীদের নিরাপত্তা ও বিকাশে সহায়ক হোক। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য যেন না হয়। সন্ত্রাস দমনেও তালেবান সদর্থক ভূমিকা নিক।
তালেবান সরকার এখনো এসব বিষয়ে এমন কিছু করেনি, যা ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশকে সন্তুষ্ট করে। এই অবস্থায় কাবুল-দিল্লি বিমান চলাচল শুরু করার প্রস্তাব ভারত মেনে নেবে কি না, কিংবা নিলেও কোন শর্ত মেনে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। আফগান জনগণের কাছে ভারতীয় চিকিৎসা পরিষেবা বরাবরই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের মতো বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রও তালেবান সরকারের চরিত্র নিয়ে সন্দিহান। এ বিষয়ে ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল। ভারতের পক্ষে স্বস্তিদায়ক হয়েছে রাশিয়া ও তুরস্কের সাম্প্রতিক অবস্থানও। এই দুই দেশ সম্প্রতি জানিয়েছে, তালেবান সরকারে সব সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব দেখা না গেলে তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না।