কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্পের ভেতরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, শরণার্থী শিবিরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া তুলে ধরার প্রচেষ্টায় কাজ করত তার এই সংগঠন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। কক্সবাজারের সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের জন্য সেসময় একজন গ্রহণযোগ্য নেতার অভাব ছিল। গত কয়েক বছর ধরে সে অভাব পূরণ করেছিলেন মি. মুহিবুল্লাহ।
"তিনি মানুষের সাথে কথা বলতেন খুব গুছিয়ে, মানুষকে বোঝানোর শক্তিটা তার খুব প্রবল ছিল। আরাকানের মূল সমস্যা, রোহ্ঙ্গিাদের জাতিগত সমস্যা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়গুলো সবই তিনি রোহিঙ্গাদের মাঝে বুঝিয়ে বলতে পারতেন।"
বাস্তুচ্যুত অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গেই ২০১৭ সালেই বাংলাদেশে এসেছিলেন ৪৮ বছর বয়সী মি. মুহিবুল্লাহ।
মি. মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের রাখাইনের প্রদেশের মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঐ এলাকায় অভিযান শুরু করার পর প্রাণ রক্ষার্থে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং সীমান্ত অতিক্রমের পর আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে।মি. মুহিবুল্লাহর ডাকে ২০১৯য়ে আয়োজিত রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে মহাসমাবেশে যেখান রোহিঙ্গারা বলেন নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিতের দাবি পূরণ হলেই কেবল তারা মিয়ানমার ফেরত যাবেন
মি. আহমেদ বলছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল যখন বাংলাদেশে আসে, তখন আন্তর্জাতিক সংস্থার যেসব প্রতিনিধি ও কর্মকর্তা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে গিয়েছিলেন, তখন "তাদের সাথে কথা বলার মত একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন তিনি, এবং তিনি ছিলেন একজন সুবক্তা।"
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। তার ডাকেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই বিশাল সমাবেশ।
"আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম এবং আমরা সেই সময় জানতে পেরেছিলাম যে সেখানে পাঁচ লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন এই মুহিবুল্লাহ। সেই সমাবেশের পর থেকেই তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করেন," জানাচ্ছেন তোফায়েল আহমেদ।গণহত্যাবিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল। ওই সমাবেশের লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয় এবং তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাবার ক্ষেত্রে শর্তগুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।