তালিবানের ভয়ে তাঁরা ঘরবন্দি হয়ে থাকবেন না। দীর্ঘ দিন ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। তালিবদের আতঙ্কে কোনও পরিস্থিতিতে তা বন্ধ করবেন না তাঁরা, স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন হেরাট প্রদেশে জাফরানের মশলা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আফগান মহিলারা। ২০০৭ সাল নাগাদ হেরাটের পাশতন জারঘন জেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে জাফরান মশলার কারখানা তৈরি করেছিলেন সাফিকে আত্তাই। ওই জমিতেই জাফরান ফুলের চাষ হয় আর কারখানায় তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামী ‘জাফরান ক্রোকাস’মশলা। আত্তাইয়ের সংস্থায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রায় সকলেই মহিলা। সংস্থার এক হাজারেরও বেশি আফগান মহিলা জাফরান ফুল তোলার কাজে যুক্ত।
গত ১৫ অগস্ট আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই এই আফগান মহিলাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়়েছে। ভয়ে অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরতে পারছেন না। কিন্তু তাও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গড়ে তোলা ওই জমি ছাড়তে নারাজ আত্তাই। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা অনেক কষ্ট করে আজ এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। কোনও পরিস্থিতিতেই আমরা ঘরে বসে থাকব না। যত ক্ষণ না আমাদের কথা ওঁদের কানে গিয়ে পৌঁছচ্ছে, আমরা চিৎকার করেই যাব।’’
নয়া আফগান সরকারে মহিলা প্রতিনিধি তো দূরের কথা, মেয়েদের স্কুলে-কলেজে লেখাপড়াতেও এখনও স্পষ্ট অনুমতি দেয়নি তালিবান। ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন আত্তাই বলছেন, ‘‘আমি আমার কথা ভাবছি না। আমি তাঁদের কথা ভাবছি, যাঁরা এখানে কাজ করে সংসার চালান। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে লড়াই, কষ্ট করে আফগান মহিলারা নিজেদের জমি তৈরি করেছিলেন। সেই জমি আবার দখল করছে তালিবান।’’
তালিবানের হাতে কাবুল দখল হওয়ার পর যখন দেশ ছাড়ার হিড়িক উঠেছিল, তখন আত্তাই-ও আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে পারতেন। কিন্তু তিনি যাননি। বলছেন, ‘‘যদি পালাতাম, তা হলে সেটা এত দিনের এই কঠোর পরিশ্রমকে অস্বীকার করা হত। আমার এই সংস্থায় শুধুই মহিলারা কাজ করেন। কারও এত সাহস নেই চাইলেই এটা বন্ধ করতে পারে।’’