দেশে যেন কেউ ভোট দিতে না পারে সেই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সরকার জেনেশুনে এই ব্যবস্থা তৈরি করেছে।আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, 'আজকে ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতা গুম হয়ে গেছেন, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও তারা আবার নির্বাচনের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে।'
নিয়োগে দলীয়করণ অভিযোগ
ফখরুল বলেন, 'কয়েকদিন আগে আমি পত্রিকায় দেখলাম, সাময়িক বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। এটাও দলীয়ভাবে হয়েছে। আজকে প্রশাসনের লোক নেওয়া হচ্ছে সব দলীয় ভিত্তিতে, আজকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে লোক নেওয়া হচ্ছে সব দলীয় ভিত্তিতে। যেখানে চাকরির জন্য যাবে সেখানে দলীয় ভিত্তিতে নেওয়া হয়।'এভাবে পুরো প্রশাসনকে তারা (সরকার) দলীয়করণ করে ফেলেছে, রাষ্ট্রকে দলীয়করণ করে ফেলেছে।'
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, 'আজকে ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতা গুম হয়ে গেছেন, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও তারা আবার নির্বাচনের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। আরে আপনারা জেনে-শুনে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছেন যে, এখানে কেউ যেন ভোট দিতে না পারে-সেই ব্যবস্থা তৈরি করেছেন।'
'আপনারা এখানে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছেন যে, কেউ কোনো বিচার পাবে না। আজকে আপনি যে কোর্টেই যান সেই কোর্টে বিএনপি দেখলেই তার জন্য আলাদা বিচার, আর বিএনপির বাইরে আলাদা বিচার। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।''বিভক্তি নয় জোট বাঁধতে হবে'
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে 'জোটবদ্ধ' আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে শুধু বিএনপির জন্য নয়, আজকে দেশকে বাঁচাতে হয়, জনগণকে যদি তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হয়, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হয়, বাঁচার অধিকার, কাজের অধিকারকে যদি ফিরিয়ে দিতে হয় তাহলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জোট বাঁধতে হবে, বিভক্তি নয়। আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে হবে।'
'সমস্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদেরকে আজকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে এবং মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ-ফ্যাসিস্ট-দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে-এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের শপথ এবং সেটাই হবে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহের প্রতি সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান প্রদর্শন। আসুন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আমরা সবাই সঙ্গে এগিয়ে যাই।'
'এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। কথা পরিষ্কার, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি ও দেশের জনগণ যাবে না। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেভাবে যা হবে ইনশাল্লাহ আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেবো।'
'আমরা বলতে চাই এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। কিন্তু এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। চেষ্টা করলে প্রতিরোধ করা হবে, বাধা দেওয়া হবে। সেই বাধার মুখে আপনারা টিকে থাকতে পারবেন না।'
নেতা-কর্মীদের সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান তিনি।নির্বাচন কমিশন কমিশন পুনর্গঠন সম্পর্কে মির্জা আব্বাস বলেন, 'ইদানীং রব উঠেছে যে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে সার্চ কমিটি দিয়ে। ভাই সার্চ কমিটি কোনোদিন শুনি নাই। এই আওয়ামী লীগের সময়ে শুনলাম-খালি কয় সার্চ কমিটি সার্চ কমিটি।'
'এই সার্চ কমিটির কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নাই। আপনারা সার্চ কমিটির মাধ্যমেই করেন আর সেভাবেই করেন- আমরা ওই জায়গাতে নাই।'
সংগঠনের আহবায়ক গাজীপুর জেলার আহ্বায়ক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও জেলা নেতা মজিবুর রহমান ও সাখাওয়াত হোসেন সবুজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া, কৃষক দলের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম বাবুল, গাজীপুর বিএনপির ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, খন্দকার আজিজুল রহমান পেয়ারা, হেলাল উদ্দিন, ভিপি ইব্রাহিম, আবু তাহের মসুল্লী, রাশেদুল হক এবং প্রয়াত হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান বক্তব্য রাখেন।