ঢাকা, মঙ্গলবার ৩ই ডিসেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

লোকটি দুদক কর্মকর্তা এনামুল বাছির

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-09-26, 12.00 AM
লোকটি দুদক কর্মকর্তা এনামুল বাছির

২০১৯ সালে গুলশান পুলিশ প্লাজায় আসেন এনামুল বাছির। তখন ডিআইজি মিজান তাকে বলেন, টাকা দিলাম, তবুও আমার নামে মামলা হলো! এমন কথোপকথনের পর তারা বের হয়ে যান।
 

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) আদালতে দেওয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে একথা বলেন পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানের স্ত্রীর দোকানের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম।

ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলায় বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে রফিকুল ইসলামসহ দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া অপরজন হলেন ডিআইজি মিজানের অর্ডারলি কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আগামির সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ১২ অক্টোবর ধার্য করেন।

এদিকে, জবানবন্দিতে কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানের উত্তরার বাসা থেকে সাদ্দাম হোসেন দুটি ব্যাগ (একটি বাজারের ব্যাগ) সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে গাড়িতে তুলে দেন। ব্যাগে ২৫ লাখ টাকা ও কিছু বই ছিল। পরে ডিআইজি মিজান সাদ্দাম হোসেনকে রাজারবাগ নামিয়ে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তোলেন। কিন্তু ডিআইজি মিজান সাদ্দাম হোসেনকে রমনা পার্কের সামনে নিয়ে আসেন এবং বলেন, তার সঙ্গে কথা বলার জন্য একজন লোক আসবে। তার সঙ্গে কথা শেষে সাদ্দাম হোসেনকে যাওয়ার অনুমতি দেন ডিআইজি মিজান। কিছুক্ষণ পরে লোকটি পার্কের আসেন। তারা দুজন পার্কে গিয়ে কথা বলেন। এরপর তারা গাড়িতে ওঠেন।  

সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, ডিআইজি মিজান চালককে ওই লোককে রাজারবাগ মোড়ের সামনে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের গলিতে নামিয়ে দিতে বলেন। যাতায়াতের মধ্যবর্তী সময়ে তারা অনেক কথা বলেন। মিজান স্যার ওই লোককে বলেন, ব্যাগে ২৫ লাখ ঠিক আছে। তখন ওই লোক প্রশ্ন করেন যে, সব ঠিক আছে ভাই? মিজান স্যার বলেন, সব ঠিক আছে। পরে ওই লোকটাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের গলিতে নামিয়ে দেওয়া হয়।  

সাদ্দাম বলেন, লোকটি যাওয়ার পর সাদ্দাম ডিআইজি মিজানের কাছে জিজ্ঞাসা করেন, উনি কে? তখন ডিআইজি মিজান তাকে বলেন, লোকটি দুদক কর্মকর্তা এনামুল বাছির। সেদিন সাদ্দাম হোসেন রাজারবাগ ব্যারাকে চলে যান।

এই কনস্টেবল বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মিজান স্যারের বাসা থেকে একটি শপিং ব্যাগ ও একটি হ্যান্ড বল গাড়িতে তুলে দেন। ব্যাগে টাকা ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে মিজান স্যার জানান, ব্যাগে ১৫ লাখ টাকা আছে। তারা সেদিনও রমনা পার্কের সামনে আসেন। গাড়িতে বসে এনামুল বাছিরের সঙ্গে কথা বলেন ডিআইজি মিজান। তাকে রমনা পার্কের সামনে আসতে বলেন। এনামুল বাছির পার্কের সামনে এলে তারা ভিতরে যান। কথা শেষে তারা আবার গাড়িতে ওঠেন।

তিনি আরও বলেন, এরপর এনামুল বাছিরকে শান্তিনগর মোড়ে নামিয়ে দিতে বলেন ডিআইজি মিজান। সেদিনও গাড়িতে তারা কথা বলেন তারা। এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানকে বলেন আপনার মামলায় কিছু নেই। আপনার কিছু হবে না। পরে তাকে শান্তিনগর মোড়ে নামিয়ে দেন ডিআইজি মিজান। এনামুল বাছির টাকাসহ ব্যাগটি নিয়ে যান।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, একই বছর ৩০ মে গুলশান পুলিশ প্লাজায় ডিআইজি মিজান যান। এনামুল বাছির সেখানে আসেন। তারা সেখানে কথা বলেন। এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানকে বলেন, আপনার মামলায় কোনো কাগজপত্র নেই। আপনার কিছু হবে না।

এ নিয়ে মামলাটিতে ১৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। এদিন কারাগারে থাকা মিজানুর রহমান ও এনামুল বাছিরকে আদালতে হাজির করা হয়।

৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন শেখ মো. ফানাফিল্লাহ।

একই বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর আদালত চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য করে মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেন।  

গত ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠন শেষে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।