সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জাতীয় ইস্যূতে মন্তব্য করে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের নানা পরামর্শও দিয়ে থাকেন তিনি। কিছুদিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিয়ে মন্তব্য করে ছাত্রদলের নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে জড়ান।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি’র ৩২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করেছেন দেশের এই বর্ষীয়ান নাগরিক।
যা বিভিন্ন সময়ে বলা তার নিজের বক্তব্যের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক। ওই অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, খালেদা জিয়া জেলে আছেন নাকি মুক্ত আছেন?
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যদি মুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে দেশবাসীর প্রত্যাশা কী ছিল? চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর জিয়ারত করতে খালেদা জিয়াকে অন্তত হুইলচেয়ারে করে নিয়ে যাবেন। উনি (খালেদা জিয়া) কি যেতে পেরেছেন? না উনি নিজে গেছেন না নেতারা তাকে নিয়ে গেছেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ ধরনের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় খালেদা জিয়া বন্দী না মুক্ত তা জানেন না তিনি।
খালেদা জিয়া বন্দী না মুক্ত-এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা পাশাপাশি বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করেছেন তিনি। খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে কেনো খালেদা জিয়াকে চন্দ্রিমা উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না-তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অজানা বলে জানালেও গত ৩১ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তার (বিএনপি চেয়ারপারসন) গৃহবন্দী থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় জাফরুল্লাহ বলেছিলেন, খালেদা জিয়া এখনও জেলে আছেন। ওনার জামিন হয় নাই। উনি এখনও বন্দী।
একইভাবে গত ১১ সেপ্টেম্বর জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি। দেশের প্রচলিত আইনে তার জামিন পাওয়ার সকল অধিকার রয়েছে। কিন্তু বিচারপতিরা কেন তাকে মুক্তি দিচ্ছেন না।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি যে প্রশ্ন করেছি তা তো ওনাদের (বিএনপি নেতাদের) করার কথা। খালেদা জিয়া মুক্ত হলে কেনো যেখানে খুশি যেখানে যেতে পারবেন না। জিয়ার কবর জিয়ারত করতে যান না? কোকোর কবর জিয়ারত করতে যান না? প্রেসক্লাবে যান না? রমনাতে হাঁটতে যান না?
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথার জবাব দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া বাইরে না মুক্ত সেটা তো অবশ্যই তার (জাফরুল্লাহ চৌধুরী) জানার কথা। খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন, এখন গৃহবন্দী। অনেক শর্ত আরোপ করে তাকে বাসভবনে রাখা হয়েছে। তিনি মুক্তভাবে কোথাও যেতে পারেন না। তিনি মুক্ত হলে কোথায় যাবেন কিভাবে যাবেন সেটা তো তার সিদ্ধান্ত।
'খালেদা জিয়া এখন গৃহবন্দী'- বিএনপি নেতাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই কথা বলে লাভ কী? তারা জামিনের ব্যবস্থা করে না কেন? কবে চেয়েছে জামিন? তারপর কী করেছে? জামিন না দিলে কী করে লোকে?
জাফরুল্লাহর সমালোচনা করে রিজভী আরও বলেন, ‘অনেকেই বলেন বা আমরা খবরের কাগজে দেখি জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জাতীয়তাবাদী শক্তির সমর্থিত বুদ্ধিজীবী বলা হয় যদি তাই হয় তাহলে তিনি প্রকাশ্যে যেভাবে বিএনপি'র নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মন্তব্য করেন এটা সকল সভ্যতা ভব্যতা শিষ্টাচারের বিপরীত। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে এখন ইস্পাত কঠিন ঐক্য বিদ্যমান।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। এরপর তাকে নেয়া হয় পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে।
হাইকোর্ট এই মামলার আপিলে তার সাজা আরও ৫ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। একই বছর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় আদালত।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে। গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
তারপর আরো তিন মেয়াদে ৬ মাস করে তার সাজা স্থগিত করে নিজ বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে সরকার।