কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কার্যতালিকায় এ আগাম জামিন আবেদনটি রয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর শুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় কলেজ শিক্ষার্থী মোশারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।এ ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন। মুনিয়া কীভাবে মারা গেল তা নিশ্চিতে অপেক্ষা করা হয় মেডিকেল রিপোর্টের জন্য।
১৬ আগস্ট আদালতে দাখিল করা মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায়, মুনিয়া ২ থেকে ৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ডিএনএসহ আনুষাঙ্গিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগপর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয় মেডিকেল রিপোর্টে। এসব রিপোর্ট আসার আগেই ১৮ আগস্ট আনভীরকে খালাস দেন আদালত।
মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীন কলেজছাত্রী মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে ‘হত্যা ও ধর্ষণ’ মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।
পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রেজাউল করিম জানান বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মামলায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা সোবহান, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা এবং শারমিন, সাইফা রহমান মিম, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়ার উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায়, উক্ত মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজানো হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী অবাস্তব, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক তথ্য দিয়ে মামলাটি সাজিয়েছেন। যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ এই ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা মোকাবিলা করবে।
তানিয়া এর আগেও তার বোন মোসারাত জাহান মুনিয়ার অপমৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের নাম জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। পুলিশের তদন্তে তার সে অভিযোগ যে অসত্য তা বেরিয়ে এসেছে, যা তদন্তকারীগণ বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছেন এবং আদালত বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উক্ত মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
একই তানিয়া বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নাম জড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অভিযোগ থেকে দেখা গেছে, কথিত ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী মিসেস আফরোজা বেগম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের স্ত্রী মিসেস সাবরিনা সোবহানকে আসামি করা হয়েছে।
ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে দেশের স্বনামধন্য বৃহৎ শিল্পপরিবারের সদস্যদের নাম জড়িয়ে তাদের হেয় প্রতিপন্ন এবং মূলত ব্ল্যাকমেইল করাই এই মামলার প্রধান উদ্দেশ্য। এমন অভিযোগে পিতা, মাতা, সন্তান ও পুত্রবধূকে আসামি করার ঘটনায় স্পষ্টত বোঝা যায়, আনিত অভিযোগ কতটা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
এসব ঘটনার সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তাদের পরিবারের কারোরই কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। বসুন্ধরা গ্রুপকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দেশের গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে বসুন্ধরা গ্রুপ অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, আপনারা এসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেশের জনগণের সামনে উপস্থাপনা করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বসুন্ধরা গ্রুপ বরাবরই দেশের প্রচলিত আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অতীতে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে যখনই কোনো ষড়যন্ত্র হয়েছে, তখনই আইনগত প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞ আদালতে বিচারপ্রার্থী হয়েছে বসুন্ধরা। তানিয়ার মামলাও আইনগতভাবে মোকাবিলা করবে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ। আমরা আশা করছি, ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্র নস্যাত হবে ইনশাআল্লাহ্।