ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য দায়িত্ব পাওয়া আহবায়ক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আমরা সংগঠনকে ওয়ার্ড থেকে মহানগর পর্যন্ত ঢেলে সাজাবো।আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের লক্ষ্যে ৯০-এর চেতনায় গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। সেটাই জনগণের প্রত্যাশা। এর মধ্যে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। সেই লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ইনশাল্লাহ সফল হবো।
আমান উল্লাহ আমান ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম রূপকার। ৯০-৯১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি। পরবর্তী সময়ে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে মোট চারবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৬ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব, ২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যানের পদমর্যাদায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সদ্য গঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
মহাখালীর নিউ-ডিওএইচএসের বাসভবনে ঢাকাপ্রেস এর সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনীতি ও বিএনপির কর্মকাণ্ড নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন আমান।
ঢাকাপ্রেস:: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি কি সঠিক পথে চলছে?
আমান: ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জনগণের আশির্বাদ নিয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছিল। এই দলের প্রথম লক্ষ্য ছিল একদলের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেটাই করেছিলেন। তিনি আধুনিক, স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে রপ্তানি করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়, পরে গণতন্ত্রও হত্যা করা হয়। এর পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলনের মাধ্যমে এবং তার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে স্বৈরাচারের পতন হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদীয় পদ্ধতি চালু হয়েছিল। সেই দলকে নির্মূল করার জন্য, যেমনিভাবে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। তার অনুপস্থিতিতে একটার পর একটা মামলা দিয়ে সাজা দেওয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তার বক্তব্য প্রচার পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী সরকার নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এসব করা হচ্ছে বিএনপিকে নির্মূল করার পরিকল্পনা থেকে। কিন্তু এই দলকে নির্মূল করা এত সহজ নয়। আস্তে আস্তে বিএনপি জনপ্রিয়তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছেছে। শুধু একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও তার অধীনে নির্বাচন প্রয়োজন। সেই নির্বাচনে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে এবং বিএনপির রাজনীতি যে সঠিক পথে চলছে সেটাই প্রমাণিত হবে।
ঢাকাপ্রেস:: আপনি বললেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, অপরদিকে তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা যতদূর জানি, কোনো সরকারই বিরোধীদলকে সুযোগ করে দেয় না। এটা আদায় করে নিতে হয়। ৯০ সালে আপনারা আন্দোলন করে যে দাবি আদায় করেছিলেন। বর্তমানে কি সে ধরনের শক্তি আপনাদের আছে?
আমান উল্লাহ: ছোট আকারে বলতে গেলে বলতে হয়, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে (২৯ ডিসেম্বর) আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে। এরশাদ যেখানে নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাকেও এমপি বানানো হয়, পরে বিশেষ দূত বানানো হয়। আজকে দলকে সুংসগঠিত করা হচ্ছে। অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনসহ দলমত সবার পক্ষ থেকে দাবি এসেছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট হবে। জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। পছন্দের সরকার গঠন করবে। সেখানে কোনো দলীয় প্রভাব থাকবে না।
ঢাকাপ্রেস:: সরকারতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবে না, তাহলে আপনারা কিভাবে সেটা আদায় করবেন?
আমান উল্লাহ: সেই লক্ষ্যেই আজকে জনগণ, সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা চায় তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে। তারা চায় তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। যারা ভিন্ন মত ভিন্ন পথের তারাও আজকে বলছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায় করতে হবে। সে লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠবে। সেখানে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আর একটি গণঅভ্যুত্থান হবে। সেই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। ৯০-এ গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। সেই চেতনায় আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে। তার অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। এর বিকল্প নেই। দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সেই দাবি আদায় করবে।
ঢাকাপ্রেস:: ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি হলো কয়েকদিন আগে। আপনি উত্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন। এ বিষয়ে কিছু বলেন।
আমান উল্লাহ: সারা দেশে কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগে যারা ছিল তারা চেষ্টা করেছেন। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে প্রথমেই ওয়ার্ড থেকে শুরু করে মহানগর পর্যন্ত সকল কমিটি ঢেলে সাজাবো। শুধু বিএনপি নয়, সকল অংগ সংগঠনের কমিটি সাজানোর মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তারা তাদের ভোটাধিকার যাতে প্রয়োগ করতে পারে। সেজন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আমাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করবো।
ঢাকাপ্রেস:: দীর্ঘদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হচ্ছে না এবং মহাসচিব দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছেন। এ বিষয়ে কিছু বলেন।
আমান উল্লাহ: দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের বিষয়ে স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। গত দুই বছরতো করোনার কারণে বসার মতো পরিস্থিতি ছিল না। আগামীতে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের কাঠামো, স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় কমিটিকে কিভাবে আরও সংগঠিত করা যায়।
ঢাকাপ্রেস:সরকারের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে আপনারা সব সময় কথা বলেন। তো আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কি এভাবেই চলবে, নাকি কোনো পরিবর্তন হবে?
আমান উল্লাহ: দেশ যে পর্যায়ে চলে গেছে, সাংবাদিকরাই লিখছে। পত্র-পত্রিকায় আসছে। ফরিদপুরের একজন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে, তাতে বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেছে। অতীতের কথা চিন্তা করে আজকের লুটপাটের বিষয়টি অনুধাবন করে আগামী দিনে বিএনপি সরকার গঠন করলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। যে পদক্ষেপের মধ্যে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে। বর্তমানে যেভাবে লুটপাট চলছে তা বন্ধ করতে বিএনপি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।