সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরুর আগে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে নিজেদের শক্তি অর্জনের পরেই আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ এসেছে বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকে।তিনদিনের বৈঠকে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের মতো অঙ্গসংগঠনগুলো ‘দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি’ গঠনের জন্য নেতারা এমন তাগাদা দেনে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।বিএনপির ৯টি অঙ্গ এবং ২টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। যেগুলোর প্রায় সবই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে।
অঙ্গসংগঠনগুলো হচ্ছে- যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ওলামা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল। এর মধ্যে ওলামা দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দল ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করে যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল তারও মেয়াদ চলে গেছে।
দুই সহযোগী সংগঠন হচ্ছে -শ্রমিক দল ও ছাত্রদল। এর মধ্যে শ্রমিক দলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৮ সেপ্টেম্বর। এ দুটি সংগঠনও তাদের নির্ধারিত মেয়াদে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি।
গত মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তিনদিন ধারাবাহিক বৈঠক হয় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের রুদ্ধদ্বার কক্ষে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের কর্মকৌশল কী হতে পারে, সংগঠনের অবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয় জানতে এমন ধারাবাহিক বৈঠক ডাকে দলের হাইকমান্ড।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনদিনের ধারাবাহিক বৈঠকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কী করণীয় এবং আমাদের সংগঠনের অবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি সভাপতিত্ব করেছেন এবং নেতাদের মতামত শুনেছেন।
তিনি বলেন, আমরা আরও কিছু সভা করব। বিশেষ করে দলের নির্বাহী কমিটি সদস্য ও জেলা নেতাদের নিয়েও সভা করবো, তাদের মতামত শুনবো। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এসব বৈঠক থেকে কী পাওয়া গেলো- এরকম প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখনই বলার সময় আসেনি। আরও কিছু বৈঠক হবে। এরপর আমরা সবকিছুই আপনাদের জানাতে পারবো। ’
ধারাবাহিক বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বৈঠকে দলের সাংগঠনিক অবস্থাকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটি দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না, কমিটিতে স্থান পেতে নানা তদ্বির-লবিং করতে হয়, মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে কমিটির জন্য তদ্বির করতে হয় ইত্যাদি বিষয়গুলোও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নজরে আনা হয়েছে।
মধ্যম সারির কয়েকজ নেতা বলেন, দল ও অঙ্গ সংগঠনে কঠোর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে রাস্তায় নেমে কোনো লাভ হবে না। আগে আমাদের নিজেদের আন্দোলনের জন্য সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রথমদিন মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, দ্বিতীয় দিন বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদক মণ্ডলী এবং তৃতীয়দিন বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অঙ্গসংগঠনের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তিনদিনের ধারাবাহিক বৈঠকে মোট ২৮৬ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ১১৮ জন বক্তব্য রেখেছেন। দলের কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এমনটাই জানান।