সুহাইল শাহীন বলেছেন, কোন দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা চালানোর কোন নীতি তাদের নেই।তালেবানের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা ভারত শাসিত কাশ্মীরের মুসলিমদের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখবে।বিবিসির হিন্দি সার্ভিসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বলেন, "মুসলিম হিসেবে কাশ্মীর, ভারত বা অন্য যে কোন দেশের মুসলিমদের পক্ষে কথা বলার অধিকার আমাদের আছে।"
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশ ভারত এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে, তবে উভয় দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে।ভারত শাসিত কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে গত ৩০ বছর ধরেই সহিংসতা চলছে।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার পর তালেবান নিজেদেরকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করেছে এবং তারা শীঘ্রই একটি নতুন সরকার গঠন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তালেবানের বিজয়ের পর এই প্রথম তাদের কোন নেতা ভারত শাসিত কাশ্মীর সম্পর্কে কোন মন্তব্য করলেন।
সম্প্রতি সিএনএন-নিউজ-এইটিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তালেবান নেতা আনাস হাক্কানি বলেন, "কাশ্মীর আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে নেই এবং অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ আমাদের নীতি বিরুদ্ধ।"পাকিস্তানভিত্তিক আরেকটি সংবাদ চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে পাকিস্তান এবং ভারতকে একসাথে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বলেন, অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান চালানোর "কোন নীতি" তালেবানের নেই।
তিনি এই মন্তব্য করলেন এমন এক সময় যখন আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু এবং শিখদের ব্যাপারে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ভারতে ২০১৪ সাল হতে নরেন্দ্র মোদির সরকারের শাসনামলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সমালোচকরা।ভারত দুবছর আগে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে, যার মাধ্যমে জম্মু এবং কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসনের নিশ্চয়তা কেড়ে নেয়া হয়। এরপর কাশ্মীর উপত্যকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর ভারতে অনেকে আশংকা করছে তালেবানের একটি অংশ হয়তো এখন পাকিস্তানের ভারত বিরোধী শক্তির প্ররোচনায় ভারত শাসিত জম্মু এবং কাশ্মীরের দিকে তাদের নজর দেবে।
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল পিটিআই এর নেতা নিলাম ইরশাদ শেখের একটি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নেয়ার সময় যা বলেছিলেন, তা এখন অনলাইনে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। এতে তিনি বলেন, "তালেবান আমাদের বলেছে, তারা আমাদের সঙ্গে আছে এবং তারা কাশ্মীরকে মুক্ত করতে আমাদের সাহায্য করবে।"আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা চীনের মতো দেশ প্রকাশ্যেই কথাবার্তা বললেও ভারত এখনো পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই আগাচ্ছে।গবেষণা সংস্থা কার্নেগি ইন্ডিয়ার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, হাক্কানি গ্রুপ অতীতে আফগানিস্তানে ভারতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। কাবুলে ভারতের দূতাবাসেও হামলা চালানো হয়েছিল।
তবে সুহাইল শাহীন বলছেন, হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে এসব কেবলই অভিযোগ মাত্র।
তিনি বলেন, "হাক্কানিরা কোন গ্রুপ নয়। তারা ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানের অংশ। তারাই ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান।"
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র সম্প্রতি দাবি করেন "তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ আলাদা দুটি সংগঠন।"
১৯৯৯ সালে আফগানিস্তানে একটি ভারতীয় বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে এই গ্রুপের কোন সম্পর্ক থাকার কথা সুহাইল শাহীন অস্বীকার ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ১৮০ জন যাত্রীবাহী জেট বিমানটি কাঠমান্ডু থেকে দিল্লি যাওয়ার সময় ছিনতাই করা হয়েছিল। এটিকে ছিনতাইয়ের পর কান্দাহারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর ছিনতাইকারীরা কাশ্মীরে লড়ছিল এমন কিছু জঙ্গির মুক্তির জন্য আলোচনা চালায়। যাত্রীদের মুক্তির বিনিময়ে ভারত তিনজন জঙ্গিকে মুক্তি দেয়। পাঁচ সশস্ত্র ছিনতাইকারীর একজনও ধরা পড়েনি।
সুহাইল শাহীন বলেন, ঐ ঘটনায় তালেবান সব ধরণের সহায়তা দিয়েছে এবং ভারত সরকারের উচিৎ তাদের কাছে 'কৃতজ্ঞ' থাকা।তিনি বলেন, "বিমানটি যাতে (কান্দাহারে) অবতরণ করতে পারে সেজন্য ভারত আমাদের অনুরোধ জানিয়েছিল, কারণ সেটিতে পর্যাপ্ত জ্বালানি ছিল না। এরপর আমরা জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারেও সাহায্য করেছি।"
ভারতীয় আলোকচিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী আফগানিস্তানে গত জুলাই মাসে কোন ধরণের পরিস্থিতিতে নিহত হয়েছিলেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন মিস্টার শাহীন।
পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী আফগান বাহিনীর একটি দলের সঙ্গে মিশে যখন যুদ্ধক্ষেত্রে তার দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন পাকিস্তান সীমান্তের কাছে স্পিন বোলডাক শহরে তালেবানের আকস্মিক হামলায় নিহত হন।সুহাইল শাহীন বলেন, এ বিষয়ে তারা তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবেন।