হাঁটু দু’টো বুকের কাছে জড়ো করে মাটির উপর বসে আছেন রোয়া হায়দরি। মুখ মাস্কে ঢাকা। চোখে শূন্যতা। হয়তো বা কিছুটা আতঙ্কও। টুইটারে ছবিটি পোস্ট করে রোয়া লিখেছেন, ‘দেশ ছেড়ে চললাম। দেশের জন্য প্রতিবাদের স্বর ফিরে পাব বলে।’আফগানিস্তানের অতিপরিচিত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব রোয়া। পরিচালক। ছবিও তোলেন। দেশ ছেড়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ আগে ছবিটি তাঁর টুইটারে পোস্ট করে রোয়া লিখেছেন, ‘আমার সারা জীবন, আমার দেশ, আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। শুধু দেশের হয়ে নিজের কথা বলতে পারব বলে। সাগরপারের এই সুদূর সফরে সঙ্গী শুধু আমার মৃত আত্মা এবং একটি ক্যামেরা।’
রোয়ার ছবিটি তোলা হয়েছে কাবুল বিমানবন্দরে। ছবিটি দেখে আফগানিস্তানের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং মহিলাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অন্যান্য দেশের বিশিষ্টরা। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, তালিব নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে বিদ্বজ্জনরা কি আদৌ সুরক্ষিত? তাঁদের কি কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে? আফগান মহিলাদের ভবিষ্যতই বা কী?
বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টা ৫৩ মিনিটে ছবিটি টুইট করেছেন রোয়া। সম্ভবত ততক্ষণে তিনি দেশের বাইরে। কারণ কাবুল বিমানবন্দর চত্বর তখন রক্তে ভাসছে। পরপর বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন প্রায় শতাধিক। ছবিতে দেখা যায় মাটিতে বসা রোয়ার পায়ের সামনে ছোট্ট একটি ব্যাগ। দূরে দেখা যাচ্ছে অপেক্ষারত বিমান। যার কিছুটা দূরে সার দিয়ে রানওয়েতেই বসে আছেন বিমান যাত্রার অনুমতি পাওয়া মানুষজন। পোস্টে রোয়া লিখেছেন, ‘আরও একবার মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে হচ্ছে। আরও একবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলে যাচ্ছি। বিদায় মাতৃভূমি। আশা করি আবার দেখা হবে।’ তবে এর আগে কবে দেশ ছেড়ে তাঁকে যেতে হয়েছিল? কেনই বা যেতে হয়েছিল? তার ব্যাখ্যা টুইটারে দেননি রোয়া।
ধুলোর মধ্যে রোয়া মাটিতে বসে আছেন। দূরে যাওয়ার আগে হয়তো দেশের মাটি ছুঁয়েই মাতৃভূমিকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি। ছবিটি নেটমাধ্যমের বিশিষ্টদের নজর কেড়েছে। রোয়ার ওই পোস্ট শেয়ারও করেছেন বিভিন্ন দেশের মানুষ। তাঁদের কথায়, ‘আফগানদের যন্ত্রণার অদ্ভুত এক ছবি ধরা পড়েছে রোয়ার ওই লেখা আর তাঁর ছবির পরতে পরতে।’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘যাঁরা রোয়ার আজকের ছবিটি দেখে হা-হুতাশ করছেন, তাঁরা একবার ওঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখুন। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক কী রকম সেটাও দেখতে পাবেন।’