ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

ঘুষ না দেয়ায় ৫ হাজার লেবু গাছ কাটলেন বন কর্মকর্তা

জেলা সংবাদদাতা।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-08-04, 12.00 AM
ঘুষ না দেয়ায় ৫ হাজার লেবু গাছ কাটলেন বন কর্মকর্তা

কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালায় এক কৃষকের পাঁচ হাজার লেবু গাছ কেটে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকের অভিযোগ, 'কেটে দেওয়া গাছগুলোতে পুরোদমে ফলন এসেছিল। বন রেঞ্জ কর্মকর্তার দাবীকৃত চাঁদা না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে আমার বাগানের পাঁচ হাজার লেবু গাছ কেটে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকার।'

ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিক নজির আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা বন রেঞ্জের আওতাধীন সোনাইছড়ি খালের তীরবর্তী বনাঞ্চলের প্রায় পাঁচ একর জমিতে গত ২০ বছর ধরে আমি চাষাবাদ করে আসছি। একসময় এখানে তরমুজ, মরিচসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করতাম। পরবর্তীতে অপহরণকারী ও সশস্ত্র ডাকাতের উৎপাত বেপরোয়াভাবে বেড়ে গেলে আট বছর আগে লেবুর বাগান শুরু করি।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন সব গাছে লেবুর ফলন আসতে শুরু করেছে। প্রতিটি গাছে ১০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত লেবু ধরেছে। আমার এই সফলতা দেখে বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও হেডম্যান লোভের বশবর্তী হয়ে আমার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করতে থাকে। চাঁদা দিতে না পারলে গত বৃহস্পতিবার সকালে জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ বন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু একদল লোক নিয়ে এসে আমার লেবু বাগানের ফলবান গাছগুলো কাটা শুরু করেন।'

'তারা একে একে আমার পুরো বাগানের প্রায় পাঁচ হাজার লেবু গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেন। জীবনের সব সঞ্চয় ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিলে তিলে বাগান গড়ে তুলেছি। একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম,' যোগ করেন তিনি।


নজির আলমের ছেলে আরিফ বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে রেঞ্জ বন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু আমাকে তার রেঞ্জ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে লেবু বাগান রক্ষা করতে হলে তিন লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানিয়ে দেন। টাকা না দিলে পুরো বাগান কেটে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন। বাবা চাঁদার টাকা দিতে না পারায় রেঞ্জ কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে বাগানের সব লেবু গাছ কেটে ফেলেছেন।'

স্থানীয়রা জানান, ওই জমিটি খালের তীরবর্তী হওয়ায় অন্যান্যদের মতো নজির আলমও চাষাবাদ করতেন। তিনি অনেক টাকা ব্যাংক ঋণও নিয়েছেন। কিন্তু বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার অমানবিক আচরণে নজির আলম এখন নিঃস্ব।

জানতে চাইলে জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ বন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত চাঁদা দাবির অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'বন বিভাগের সংরক্ষিত বনে বাগানটি সৃজন করায় সেটি কেটে দেওয়া হয়েছে। যারা এভাবে বনভূমি দখল করে বাগান করেছেন তাদের বাগানও পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।'

জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

রামু অঞ্চলের লেবু বাগান মালিকদের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নজির আলম বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমিতে লেবু বাগান করেছে এটি ঠিক। তার মতো আরও অনেক মানুষ বন বিভাগের জমিতে চাষাবাদ এবং বাগান করছেন। তাহলে শুধুমাত্র নজির আলমের বাগান কেন কেটে ফেলা হবে। এখানেই তো বন বিভাগের কর্মচারীদের অবৈধ, অনৈতিক ও বিতর্কিত ভূমিকা প্রমাণিত হয়।'

সুশাসনের জন্য নাগরিকের রামু উপজেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলম লেবু গাছ কেটে ফেলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।তিনি বলেন, 'ফলবান গাছ কাটার চেয়ে বড় বর্বরতা আর কিছুই হতে পারে না।'