সরকারি চাকরির মাত্র ১০ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এই প্রকৌশলী মিল্টন দস্তিদার। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পিআইও পদে কর্মরত বলে জানা গেছে। তার চাকরি বয়স মাত্র ১০ বছর হলেও এ সময়ে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। অনিয়মের এসব অর্থ দিয়ে গড়েছেন তিনি অঢেল সম্পদ- এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এনিয়ে তদন্ত চলছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও।
অভিযোগ রয়েছে, পটিয়া উপজেলা ও নগরে তার নিজের নামে, স্ত্রী, নিজের ভাই ও বৌয়ের ভাই এর নামে রয়েছে নামে-বেনামে ফ্ল্যাট, জায়গা-জমি। এছাড়াও বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, এফডিআর।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মধ্যম হাইদগাঁও ৫ নম্বর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ দস্তিদারের পুত্র মিল্টন দস্তিদার। বর্তমানে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছে। ২০১২ সালের দিকে শুরুতে ফেনী জেলাতে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের দেব পাহাড় এলাকায় সিএ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (সিপিডিএল) থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। ফ্ল্যাট নম্বর ফাইভ-সি। ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট কেনার পর সেখানে প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ করে সাজ-সজ্জা করানো হয়। চট্টগ্রামের পটিয়ার মধ্যম হাইদগাঁওয়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ‘অরণ্য নীড়’ নামে তিনতলা বাড়ি রয়েছে তার। পটিয়া পৌরসভা বাইপাস এলাকায় ও নগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় রয়েছে নিজের নামে ও পরিবারের সদস্যেদের নামে জায়গা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের পটিয়ায় নিজ বাড়িতে কিনেছেন কোটি টাকা দামের পৃথক দুটি ১৮ শতকের জায়গা। এসব তথ্য উপাত্ত অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন ব্যাংক হাটহাজারী রোড সরকারহাট শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংক জুবলী রোড শাখা সহ দেশের অন্যতম আরও কয়েকটি ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র নিজ নামে, স্ত্রী ও বাবার নামে রয়েছে একাধিক একাউন্ট ও সঞ্চয়পত্র।
এছাড়া তার স্ত্রী'র ভাই এর নামে কয়েক কোটি টাকার ডিপিএস ও এফডিআর রয়েছে এই কর্মকর্তার। গ্রাম ও নগরে তার স্ত্রী, বাবা ও ভাইদের নামে বেশ কিছু দোকান ও জায়গাতে বিনিয়োগ করার তথ্যও পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিলো মিল্টন দস্তিদারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায়। এ ঘটনায় চট্টগ্রামে রূম্পা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান এই কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী ওই নারীকে এককালীন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে 'সমাধান' হয়েছিল সেই অভিযোগের। প্রচার রয়েছে, রূম্পার এক সন্তান রয়েছে। তবে পিতৃত্ব পরিচয় নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য। একইসঙ্গে মিল্টনের বিরুদ্ধে ভারতে অর্থপাচারের গুঞ্জনও রয়েছে বেশ।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মিল্টন দস্তিদারকে ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল করা হলে প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবার একাধিবার কল করার পরও সেখান থেকে সাড়া মেলেনি।