কোরবানির ঈদ পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। গত বছর ঈদুল আজহার আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিলো। এবারের ঈদের আগেও করোনার সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। বলতে গেলে দেশজুড়ে এখন চলছে করোনার ‘তাণ্ডব’। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে চলছে কঠোর লকডাউনও। ফলে সারা দেশের মতো কুমিল্লাতেও কোরবানির পশুর হাট নিয়ে জনমনে বেড়েছে উৎকণ্ঠা।
বিশেষ করে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার ৩০ হাজারের বেশি খামারি রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। এসব খামারিদের বেশিরভাগেরই খামারে পড়ে আছে কোটি টাকার গরু। কোরবানির ঈদে বিক্রির উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে লালন-পালন করা এসব গবাদিপশু শেষ পর্যন্ত হাটে ওঠানো ও বিক্রি করা যাকে কি-না, এ নিয়ে খামারিদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সরেজমিনে জেলার বেশ কয়েকটি গরুর খামারে ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
এদিকে, করোনার সংক্রমণ এড়াতে গত বছরের মতো এবারও অনলাইনে গবাদিপশু বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। অনেকে এরই মধ্যে অনলাইনে কোরবানির জন্য পশু কিনতে শুরু করেছেন। তবে জেলার বেশিরভাগ খামারি এখনো অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেননি এবং পারদর্শী নন। যার কারণে খামারে লালন-পালন করা গবাদিপশু বিক্রি করতে পারা নিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে দিন পার করছেন খামারিরা।
কোরবানির ঈদে কুমিল্লায় ২ লাখ ৩৭ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে
সরেজমিনে কুমিল্লা নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দিশাবন্দ এলাকার রামিশা ক্যাটেল ফার্মে গিয়ে গেছে, এবারের কোরবানির ঈদে বিক্রির উদ্দেশ্যে মোট ৩০টি গরু মোটাতাজা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গরুগুলোর ওজন ১২ থেকে ২০ মণ পর্যন্ত রয়েছে। এসব গরু আড়াই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাকছেন তাঁরা। তবে এখনও কোন গরু বিক্রি হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অপেক্ষায় রয়েছেন হাটে নিয়ে গরুগুলো বিক্রি করবেন বলে। তবে এবার পশুর হাট বসবে কি-না এনিয়েও উৎকণ্ঠা রয়েছে তাদের মধ্যে।
গরুগুলোর পরিচর্যাকারী কবির হোসেন বলেন, আমরা গরুর খাদ্যতে কোন প্রকার মেডিসিন ব্যবহার করি না। প্রাকৃতিকভাবে গরুগুলো লালন-পালন করেছি। দিনরাত পরিশ্রমের ফলে ইতোমধ্যে গরুগুলো ভালোই মোটাতাজা হয়েছে। এখন গরুগুলোর বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু হাট না বসলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।
কুমিল্লায় ৩৯১টি পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে
রামিশা ক্যাটেল ফার্মের পরিচালক সবুর আহমেদ বলেন, আমাদের খামারে থাকা ৩০টি গরুর মূল্য এক কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এখনো কোন গরু বিক্রি হয়নি। গরু বিক্রি করা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তার মধ্যে আছি। আমরা অপেক্ষায় আছি কবে হাট বসবে। কারণ হাট না বসলে আমরা গরুগুলোর সঠিক দাম পাবো না। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে আমাদের দিন কাটছে।
দিশাবন্দ দক্ষিণ পাড়া এলাকার ফাজর এগ্রোমেট্রিক্স ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ৩৯টি গরু পালন-পালন করছে। এই খামারের গরুগুলো বেশিরভাগই মাঝারি আকৃতির। এখানে ৯০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা মূল্যর গরুও রয়েছে। তবে এখনো কোন গরু বিক্রি হয়নি প্রতিষ্ঠানটির।
ফাজর এগ্রোমেট্রিক্স ফার্মের পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান বলেন, আমাদের গরুগুলোর মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরুগুলো মোটাতাজা করেছি। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতি আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার কারণে কঠোর লকডাউন চলায় আমরা গরুগুলো হাটে নিতে পারবো কি-না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। যদি শেষ পর্যন্ত আমরা হাটে নিয়ে গরু বিক্রি করতে না পারি, তাহলে আমাদের মতো প্রায় সকল খামারিকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
কোটি টাকার গরু খামারে, চিন্তার ভাঁজ কপালে
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবারের কোরবানির ঈদে বিক্রির উদ্দেশ্যে জেলার ১৭টি উপজেলা ও একটি সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে মোট ৩০ হাজার ১৮৮টি খামারে গবাদিপশু লালন-পালন করা হয়েছে। এবারের কোরবানির ঈদে জেলায় ২ লাখ ৩৭ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪৫টি পশু। এবার চাহিদার তুলনায় ১ হাজার ৩৪৫টি পশু বেশি রয়েছে কুমিল্লায়।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, গত বছরের মতো এবারও অনলাইনে গবাদিপশু বেচাকেনার সুযোগ রয়েছে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে আমরা সকলকে অনলাইনে গবাদিপশু বেচাকেনা করতে উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়া আমরা খামারিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এরপরও জেলার ৩৯১টি পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। আগামী ১৪ জুলাইয়ের পর লকডাউন যদি শিথিল হয়, তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব হাট বসবে বলে জানিয়েছেন তিনি।