সরকারি পর্যায়ে গৃহঋণ প্রদানকারী একমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি) ২০২০-২০২১ অর্থবছরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছে। সদ্য সমাপ্ত এ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি অর্জন-নির্দেশক অধিকাংশ সূচকে বিগত যে কোন বছর অপেক্ষা বেশি সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ঋণ মঞ্জুরী, ঋণ বিতরণ, শ্রেণীকৃত ও সাধারণ খেলাপীসহ সামগ্রিক ঋণ আদায়, মামলা নিষ্পত্তি ও অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি এবং ঋণের সমুদয় পাওনা পরিশোধকারী সম্মানিত গ্রহীতাদের বন্ধকীকৃত দলিলপত্র ফেরৎ প্রদানের ক্ষেত্রে বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা থেকে অধিক অর্জন সম্ভব হয়েছে। বছরজুড়ে করোনা মহামারীজনিত বিরূপ আর্থসামাজিক অবস্থার মধ্যেও অধিকাংশ সূচকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত অর্জন প্রতিষ্ঠানটির সারাদেশের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অদম্য আন্তরিক পরিশ্রমের ফসল মর্মে উল্লেখ করে বিএইচবিএফসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম এ অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিএইচবিএফসি সারাদেশে ৬১টি শাখা, ১৪টি রিজিওনাল ও ১০টি জোনাল অফিসের মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ, ফ্ল্যাট ও হাউজিং ইক্যুপমেন্ট ক্রয়ে সরল সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নতুন চালু করা জিরো ইক্যুইটি গৃহ নির্মাণ ঋণসহ মোট ১১টি ঋণ-প্রোডাক্টের অনুকূলে এ অর্থবছরে মোট ৫৫০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরী ও ৫০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। বছরান্তে মঞ্জুরী ও বিরতণকৃত ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৬১৬.১৮ ও ৫১৩.৮৬ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ মঞ্জুরীর পরিমাণ শতকরা ১১২.০৩ শতাংশ এবং বিতরণ হয়েছে শতকরা ১০২.৭৭ শতাংশ। বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ঋণ মঞ্জুরী ও ঋণ বিতরণ অপেক্ষা এ অর্থবছরে ঋণ মঞ্জুরী ও বিতরণের পরিমাণ যথাক্রমে (৬১৬.১৮-৪৫৫.৩১) = ১৬০.৮৭ ও (৫১৩.৮৬-৪২১.৯৫) = ৯১.৯১ কোটি টাকা বেশি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে শ্রেণীকৃত ও অশ্রেণীকৃত খেলাপী ঋণ হতে যথাক্রমে ১৪৩.৩০ ও ৪৭৭.৬১ কোটি টাকা আদায়-লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে যথাক্রমে ৪০.০০ ও ৫০৯.০০ কোটি টাকা। বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সর্বমোট ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৮৪.৮৫ কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সর্বমোট ঋণ আদায় পূর্ববর্তী বছর অপেক্ষা (৫৪৯.০০-৪৮৪.৮৫) = ৬৪.১৫ কোটি টাকা বেশি। ঋণ মঞ্জুরী, ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের এ অর্জন প্রতিষ্ঠানটির জন্য এযাবৎকালের সর্বোচ্চ মর্মে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অর্থবছরের শেষ ৪ মাসে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনার ফলে প্রায় প্রতিটি সূচকে লক্ষ্যমাত্রার অধিক অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। খেলাপী গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আদালতে পরিচালিত মামলা নিষ্পত্তি এবং সরকারি বানিজ্যিক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সফলতা বিগত অর্থবছর অপেক্ষা বেশি। পূর্ববর্তী বছর ১০টি বানিজ্যিক অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছিল। পক্ষান্তরে, এবছর নিষ্পত্তিকৃত এ আপত্তির সংখ্যা ৪২টি যা পূর্ববর্তী বছরের তিন গুনেরও অধিক। করোনাজনিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মাননীয় আদালতের কার্যক্রম সীমিত থাকার মধ্যেও পূর্ববর্তী বছর অপেক্ষা এ বছর মামলা নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪.০৭ শতাংশ। কর্পোরেশনের ঋণের সমুদয় পাওনা পরিশোধকারী সম্মানিত গ্রাহকদের ঋণের দায়মুক্তি সনদসহ তাদের বন্ধকীকৃত দলিলপত্র ফেরৎ প্রদানের সংখ্যাও এ অর্থবছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অধিক। উল্লেখ্য প্রতিষ্ঠানে করোনাকালীন খরচ সংকোচনের বিপরীতে সার্বিক আদায় ও আয় বেশি হওয়ায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি নীট ১৭৩.৫৪ কোটি টাকার (কর-পূর্ব) মুনাফা (সাময়িক) অর্জনে সক্ষম হবে মর্মে আশা করা যায়। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষনার পাশাপাশি বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম-এর যোগদান পরবর্তীতে গত ১৬ মার্চ হতে ২৩ জুন’ ২১ পর্যন্ত ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচীসহ নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ ও লক্ষ্য অর্জনে কঠোর মনিটরিং ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করায় শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।