ঢাকা, শুক্রবার ২৯ই মার্চ ২০২৪ , বাংলা - 

ওসিসহ ৭ পুলিশকে বরখাস্তের রায় স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-06-20, 12.00 AM
ওসিসহ ৭ পুলিশকে বরখাস্তের রায় স্থগিত

বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মো. আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের আদেশসহ পুরো রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।রোববার (২০ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদালত এই আদেশ দেন।

আদালতে পুলিশের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী।

এর আগে গত ১৩ জুন বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের ঘটনায় মামলা বাতিল এবং বাকেরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মো. আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দেওয়ার কথা আদেশে বলা হয়।

আদালতে শিশুদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সরোয়ার পায়েল।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। পরে ওই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়।

একইসঙ্গে এ মামলায় হাইকোর্ট ৭ দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলো হলো:

১. চার শিশুকে গ্রেফতার ও থানা হেফাজতে আটক রাখাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

২. চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত।

৩. বাকেরগঞ্জ থানার ওই সময়ের ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

৪. সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

৫. চার শিশুকে আটক করে প্রিজনভ্যানে করে আনা চার পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে।

৬. চার শিশুকে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুডিশিয়াল মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।

৭. শিশু আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য গাইডলাইন আকারে প্রকাশ করে প্রত্যেকটা থানায় সার্কুলেট করতে বলা হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর রাতে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ৪ শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে রাতেই শিশুদের এসি মাইক্রোবাসে করে তাদের নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি চার শিশুকে যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে চার শিশু ও তাদের অভিভাবকসহ ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়।

সেদিন রাত ৯টায় বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বসিয়ে এই আদেশ দেন। এদিকে হাইকোর্টের এই আদেশ অবহিত হবার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের বিচারক চার শিশুকে জামিন দেন।

পরে একই বছরের ১১ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুল জারি করেন আদালত।

প্রসঙ্গত, ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত ৬ অক্টোবর মামলা করা হয়। এ মামলায় ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরদিন ৭ অক্টোবর তাদের বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ এক আদেশে ওই চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এনিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। এই সংবাদ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে। এরপর রাতেই বিচারপতিদ্বয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়াল আদালত বসিয়ে আদেশসহ রুল জারি করেন।