সমাজের একেবারে নিম্নস্তরে পরে থাকা মানুষগুলো তাদেরকে টেনে তোলা তাদের জীবন-মান উন্নত করা, মূল জনগণের সাথে সম্পৃক্ত করা, সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। এটাই আমাদের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বা তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। অর্থ উপার্জন করা জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করা, তাদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা এই নীতিমালাটিই হচ্ছে আমাদের আওয়ামী লীগের নীতি। এটাই আমাদের জাতির পিতা শিক্ষা দিয়েছেন এবং সেই নীতিমালা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সুফলটা পাচ্ছে এদেশের মানুষ। সমাজে একেবারে হতদরিদ্র মানুষ তারা কিন্তু আস্তে আস্তে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে। উঠে আসছে এবং সেটিই আমাদের লক্ষ্য।
রোববার (২০ জুন) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের ( ২য় পর্যায়) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ৪৫৯টি উপজেলা প্রান্তে সংযুক্ত ছিল। এছাড়া কয়েকটি উপজেলা প্রান্তে যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। একটা ঘর যখন মানুষ পায় তখন মানুষের ভেতরে যে আনন্দ, তার মুখে যে হাসি, এর থেকে বড় পাওয়া তো আর কিছু না। আমি মনে করে করি এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু না।
আজ মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। গত জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর প্রদানের পর রোববার (২০ জুন) দ্বিতীয় পর্যায়ে এক সঙ্গে আরও প্রায় ৫৩ হাজার ৩৪০ টি অসহায় পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার। এছাড়া আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে।
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
পাশাপাশি মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের ঘরবাড়ি ঘোষণা দেয়ার পর সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের এগিয়ে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই যে তাদের ভিতরে একটা যে চেতনা জেগেছে, গৃহহারা মানুষকে একটা ঘর দেয়া; কারণ যার ঘর নাই বাড়ি নাই তাকে ফুটপাতে পড়তে হয়, রাস্তার পাশে, রেললাইনের পাশে বা বিভিন্ন জায়গায় ঝড় বৃষ্টি বাদলা সবকিছু মাথায় নিয়ে থাকে জীবনযাপন করতে হয়। সে যখন একটা ঘর পায়, তার জীবনটাই বদলে যায়।
প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মানুষের জন্য মানুষ। মানুষের জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ, এটিই তো সবথেকে বড় কথা।
তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি যে বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করবো। দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে আমি মনে করি সবচেয়ে বড় দরকার শিক্ষা। আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ককে অনুসরণ করেই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি।
তার পাশাপাশি গৃহহীন-ভুমিহীন মানুষকে ঘরবাড়ি করে দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে আশ্রয়ণের মাধ্যমে এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ ঘর পাবে সেই সাথে তাদেরকে কিছু ট্রেনিং দেয়া হয়, ঋণ দেয়া হয় এবং নগদ টাকা দেয়া হয়, তাকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। যাতে করে সে ভালভাবে বাঁচতে পারে, কিছু করে খেতে পারে। পরমুখাপেক্ষী না হতে হয়। সে যেন নিজের জীবনটাকে নিজেই গড়ে তুলতে পারে। বস্তিবাসিরাও তার নিজ গ্রামে ফিরে গেলে সেখানেও একটা ফান্ড এবং প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচি। নিজের গ্রামে গেলে সেখানে ঘরবাড়ি, ছয় মাসের জন্য ভিজিএফের মাধ্যমে বিনা পয়সায় খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তার ঋণের ব্যবস্থা করা অর্থ্যাৎ পুর্নবাসনের ব্যবস্থা আমরা করে দেবো।
সরকার প্রধান বলেন, ঢাকা শহরে আামদের যে বস্তিবাসী আছে। তারা বস্তিতে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে এবং যে ভাড়া দিয়েই যখন থাকবে তখন ভালভাবে থাকুক। আমরা তাই বস্তিবাসির জন্য ভাড়ায় থাকায় জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। তাদের ভাড়া দিয়েই থাকতে হবে। যে টাকাটা তারা ভাড়া দেয় একটা বস্তির ঘরের জন্য ঠিক সেই টাকাটাই তারা ভাড়া দেবে কিন্তু তারা থাকবে একটু ভাল পরিবেশে। সে প্রকল্পটাও আমরা নিয়েছি, খুব শিগগরই পুর্নবাসন শুরু করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির মূল কথা হচ্ছে একবারে তৃণমূল মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের জীবন উন্নত করে দেওয়া। ক্ষমতায় থাকলে শুধু নিজেই খাব, ভালো থাকব সেটাতো না; ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষের সেবা করা সুযোগ, আমরা মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।