জলবায়ু সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্মত হয়েছেন জি–৭ নেতারা। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে কমানোর অঙ্গীকারও করেছেন তারা। জলবায়ু সুরক্ষার দাবিতে বৈশ্বিক জলবায়ু ও পরিবেশবিষয়ক আন্দোলন ‘এক্সটিংশন রিবেলিয়ন’–এর অধিকারকর্মীদের পৃথিবীর প্রতিকৃতি নিয়ে বিক্ষোভ। গত শনিবার যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে জি-৭ সম্মেলনস্থলের বাইরে।
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জি-৭ নেতারা। জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বন নির্গমন রোধে তারা নতুন সংরক্ষণ এবং লক্ষ্য চূড়ান্ত করেছেন। যুক্তরাজ্যের কারবিস বেতে আয়োজিত তিন দিনের সম্মেলন শেষে পশ্চিমা ঐক্যের পুনর্জন্ম পরিদর্শিন করলেন। সম্মেলন শেষে ইশতেহারে আগামী বছরের মধ্যে ৮৪ কোটি ডোজ করোনার টিকা সহজলভ্য করার কথা বলা হয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর পর বিশ্বের ধনী দেশগুলোর নেতারা মুখোমুখি বৈঠকে বসলেন। এই বৈঠকে তারা দশকের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে ভূমি ও সমুদ্রের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সম্মত হয়েছেন।
জি-৭ নেতারা ‘নেচার কম্প্যাক্ট’ নামে চুক্তি সই করেছেন, যাতে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও নষ্ট রোধ করার বিষয়টি রয়েছে। এ ছাড়া ২০১০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের কার্বন নির্গমন অর্ধেকে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির কথাও রয়েছে।
ইশতেহারে রয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে ৮৪ কোটি ডোজ করোনার টিকা সহজলভ্য করা হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের জি-৭ একটি টাস্কফোর্স প্রতিষ্ঠা করবে।
চুক্তিটির প্রশংসা করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও সম্মেলনের আয়োজক বরিস জনসন বলেছেন, ‘জি-৭ আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য বিশ্বব্যাপী সবুজ শিল্পবিপ্লব চালাতে চেয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, নির্গমন হ্রাস প্রকৃতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এবারের জি-৭ সম্মেলনে অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিল করোনা মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি। আগামী নভেম্বরে জাতিসংঘের কপ২৬ সম্মেলনের আগে এ বিষয়ে ভিত্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা করা হয়েছে এবারের সম্মেলনে।
জি–৭–এর ইশতেহার
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এবারের জি–৭ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক ইশতেহার এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে তারা কারবিস বেতে খসড়া ইশতেহার দেখেছে। ওই ইশতেহারের কোভিড–১৯ অংশে রয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে ৮৪ কোটি ডোজ করোনার টিকা সহজলভ্য করা। জি–৭ সম্মেলন থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানে সময় উপযোগী, স্বচ্ছ, বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে বিজ্ঞানভিত্তিক কোভিড-১৯–এর উৎসের তদন্ত করতে হবে। জি-৭ একটি টাস্কফোর্স প্রতিষ্ঠা করবে, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য একটি পরিষ্কার ও সবুজ বৃদ্ধির তহবিল স্থাপন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।
নতুন করে বন্ধন সৃষ্টি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের ক্ষমতার অবসানের পর জি-৭–এর সাত দেশ যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের মধ্যে নতুন করে বন্ধন সৃষ্টির জন্য আগ্রহী হয়েছেন। জো বাইডেন তার পূর্বসূরির একাকী চলার পথ ছেড়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে নতুন অধ্যায় শুরুর কথাও বলেছেন। এবারের সম্মেলনে করোনাভাইরাস মহামারির মতো জীবন ও জীবিকাবিধ্বংসী আর কোনো বৈশ্বিক মহামারি যাতে ভবিষ্যতে না হয়, তা ঠেকানোর লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের ঘোষণা চূড়ান্ত করেছেন শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট জি-৭-এর নেতারা।
বিশ্বে চীনের আধিপত্য ও আগ্রাসন রুখে দিতে কৌশলগত পরিকল্পনা ঘোষণা করতে এককাট্টা হয়েছে জি-৭ দেশগুলো। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নেওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোডস ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির (বিআরআই) প্রভাব থেকে বিশ্বের শতাধিক দেশকে মুক্ত করতেই পাল্টা পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (বি৩ডাব্লিউ) কর্মসূচির আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাঠামোগত উন্নয়নে বিশাল অঙ্কের সহায়তা দিতে যাচ্ছে জি-৭। জি–৭ নেতারা জিনজিয়াং অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকারের বিষয়টিকে সম্মান দিতে ও হংকংকে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন দিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।