দিনের পর দিন পদ্মার ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মানচিত্র। প্রতি বছরের নিয়মিত পদ্মার ভাঙনকে এক প্রকার নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছে পদ্মা পাড়ের মানুষ।
প্রতি বছরই পদ্মার ভাঙনে গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে শতাধিক পরিবার। বছরের শুরু এবং শেষ দিকে ভাঙন থাকলেও এবার ভাঙন শুরু হয়েছে কিছুটা সময় আগেই। এরই মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ১০টি পরিবার। ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার তাগিদে ঘর-বাড়ি স্থান্তরের কাজেও ব্যস্ত কিছু পরিবার। অসময়ের পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা পদ্মা পাড়ের মানুষ। পদ্মার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে গাছ-গাছালি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছে অনেকেই।
ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মায়
কোন ত্রাণের চাহিদা নেই পদ্মা পাড়ের মানুষের। ত্রাণ না পাওয়ায় নেই কোন হতাশাও। তবে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দা।
ভাঙন নিয়ে আলাপকালে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোট কান্দি গ্রামের অস্থায়ী বাসিন্দা নূর ইসলাম প্রামাণিক জানান, সাত বারের ভাঙনে এখন নিঃস্ব তিনি। পারিবারিক অভাব অনটন সামলে সাধ্য হয়নি নতুন করে ভিটেমাটি ও ঘর-বাড়ি করার। তাই দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে কোট কান্দি এলাকায় শ্যালিকার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এবার সেই বাড়িও ভাঙনের কবলে থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
একই এলাকার বৃদ্ধ তাউজুদ্দিন মিয়া (৭০) বলেন, জীবনের সব সঞ্চয় এখন পদ্মার পেটে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে পদ্মার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো টিকে আছি। তবে এবারের পরিস্থিতিতে পরাজিত হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।
উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর এলাকার বারেক গাজি জানান, কয়েকদিনের ব্যবধানে বিলীন হয়ে গেছে তার ১০জন প্রতিবেশীর বসত বাড়ি। এবার তার পালা। পদ্মার ভাঙন থেকে ঘরসহ প্রয়োজনীয় জিনিস রক্ষায় সব সরিয়ে শূণ্য করে রেখেছি ভিটে মাটি। যে কোন মুহূর্তে জীবনের শেষ সম্বলটুকুও পদ্মার পেটে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাফিজা খাতুন (৭৫) জানান, বিয়ের সময় কৃষি জমি এবং গৃহস্থলিসহ বড় পরিবার ছিলো তার। কয়েক দফার ভাঙনে বেশ কিছু বছর আগেই পদ্মার পেটে চলে গেছে সব কৃষি জমি। এবার ভিটেমাটি শূণ্য হয়ে যাওয়ার ভয়ে দিশেহারা তিনি।প্রতিবছর ভাঙনের কারণে পদ্মায় বিলীন হচ্ছে যাচ্ছে অনেক কৃষি জমি কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জিয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে হুট করে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে। এরপর থেকেই ভাঙন শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ বিঘা কৃষি জমি ও ১০টি বসত ভিটে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে রয়েছে আরও শতাধিক বসত ভিটে।
তিনি আরও জানান, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে আগে ১৩টি মৌজা ছিলো। এখন আছে মাত্র একটি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে সেটিও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তাই পদ্মা পাড়ের মানুষদের জান-মাল রক্ষায় ত্রাণ না দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী মাইনুদ্দিন বলেন, পদ্মার ভাঙন রোধে হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর থেকে কাঞ্চনপুর এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। করোনার জন্য কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে ভাঙন এলাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।