নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ জনবলসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যে নির্দেশ জারি করেছে, তা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কফিনে সর্বশেষ পেরেক।বুধবার (২ জুন) নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর সম্পর্কে আমার বক্তব্য’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এটি সংবিধানের ১১৯ ধারার পরিপন্থী। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমি তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।
তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদের যুগ্মসচিব স্বাক্ষরিত ২৪ মে ২০২১ তারিখের পত্রে এনআইডি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন এর বদলে সরকার শব্দটি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এনআইডির বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান কতটা যৌক্তিক তা বিবেচ্য। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
মাহবুব তালুকদার বলেন, এর ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজনির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে জটিলতার সৃষ্টি হবে। এছাড়া এতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ভুলুণ্ঠিত হবে। এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না বলে মনে করি। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের সামিল। নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এ যাবৎকালে এমন ঘোরতর দুর্দিন আর আসেনি। সংবিধানের ১০৮ (৪) ধারায় বলা হয়েছে- ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন’। এটি কমিশনের জন্য রক্ষাকবচ হলেও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এখন কোথায়? আমি আশঙ্কা করি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ অন্যত্র স্থানান্তর সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার অন্তিমযাত্রার আয়োজন।