মোসরাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি আনভীর সহ হত্যা প্ররোচনায় সংশ্লিষ্ট সকলের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতারা।বুধবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল গুলশান-২ এ নিজ বাসায় খুন হন মোসরাত জাহান মুনিয়া। এ ব্যাপারে তার বড় বোন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা নুসরাত জাহান তানিয়া বাদি হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন যার প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর।
এই মামলা দায়েরের পর থেকেই মুনিয়াকে চরিত্রহীন বানানো এবং তার বোন তানিয়ার চরিত্র হননে অপপ্রচার, বাদি ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি, মামলা প্রত্যাহারে নানা ধরণের প্রলোভন সহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তারা ইতি মধ্যে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেছে।
মেহেদী বলেন, মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যাকাণ্ড কে শুরু থেকেই আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ খুবই তৎপর।
মুনিয়া ২০১৬ সালে ঢাকায় এসে মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা স্কুলে ভর্তি হয়। সে সময় দুই বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত হোস্টেলে থাকে এবং এসএসসি পাশ করার পর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তি হয়ে প্রায় এক বছর ২০১৯ সাল পর্যন্ত হোস্টেলে থাকে এবং অল্প কিছুদিনের জন্য কলেজের কাছাকাছি দুই বান্ধবীর সাথে সাবলেটে থাকে। মুনিয়ার কবিতা ও গান লেখার ঝোঁক ছিল এবং সে বাংলা-ইংরেজি সাবলীলভাবে বলতে পারতো। তার উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি ছিল ভাল।
বসুন্ধরা গ্রুপের গণমাধ্যমে পাঠক ফোরামের সদস্য হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ও সংশ্লিষ্টদের সাথে তার চেনা জানা ছিল আর সেই সূত্র ধরে একটা অনুষ্ঠানে যায় মুনিয়া, সেখানে প্রধান অতিথি ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। সম্ভবত সেখান থেকেই মুনিয়া আনভীরের চোখে পড়ে এবং এরকম একটা ছোট মেয়েকে প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্কটাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যায় সে। যা আনভীরের পরিবার জানলে এক পর্যায়ে পিয়াসা নামক একজন নারীর মাধ্যমে আনভীরের মা ডেকে নিয়ে মুনিয়াকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় বলে শোনা যায়।
উদ্বেগ প্রকাশ করে মেহেদী বলেন, সাধারণত কোন এজাহার হলেই পুলিশ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়ে উক্ত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এমনকি তাকে না পেলে তার বাবা- মা, স্ত্রী, পরিবারের সদস্যদের এবং সন্দেহভাজন অনেককেই গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। মুনিয়া হত্যা মামলার ক্ষেত্রে প্রধান আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মনে সংশয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে যা আমরাও প্রত্যক্ষ করছি। তাহলে আমরা কি বুঝে নিব, প্রশাসন তাদের হাতে জিম্মি?
মুনিয়া হত্যাকাণ্ড পরই দ্রুত দেশ ছাড়ে আনভীরের মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ। যেহেতু ইতিপূর্বে আনভীরের মা হত্যার হুমকি দেয়ার পর মুনিয়া ঢাকা ছেড়ে চলে যায় এবং আবার ফিরে আসার পর তার ছেলে আনভীরের সাথে সম্পর্ক চলমান রাখে। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি আনভীরের পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এটা হত্যাকাণ্ড না হত্যা এটা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
মৃত্যুর আগে শারমিন সাহেদ ও মুনিয়ার বড়বোন তানিয়ার ফোন আলাপে মুনিয়ার মৃত্যু আশঙ্কায় উদ্বেগ, লাশ উদ্ধারের সময় রুমের দরজার অবস্থান, লাশের অবস্থান, রুমের পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও মুনিয়ার লিখিত ডায়েরীসহ বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনায় অবস্থাদৃষ্টে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন বলয়ের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে মুনিয়া হত্যার প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি। আনভীর দেশে না বিদেশে তা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি ও আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় মুনিয়া হত্যায় ন্যায় বিচার আদৌও হবে কি না তা নিয়ে নাগরিক হিসেবে আমরা শঙ্কিত।
মুনিয়া হত্যা মামলার অগ্রগতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনের নেতারা।
দাবি সমূহ হল- অনতিবিলম্বে মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। মুনিয়া হত্যা মামলায় সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আনভীরের মা, পিয়াসা এবং তার সহযোগী মিশু হাসান, বাড়ির মালিক, নিরাপত্ত প্রহরী, গাড়ি চালকসহ সন্দেহভাজন সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। গণমাধ্যমকে অপব্যবহার করে বাদি ও মৃত মুনিয়ার চরিত্র হনন করার চেষ্টায় লিপ্ত বসুন্ধরা গ্রুপের সকল মিডিয়ার লাইসেন্স বাতিল করা হোক। ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক জবরদখলকৃত ব্যক্তি ও সরকারি খাস জমি ভূমি মালিকদের ফেরত দেয়া হোক। আলোচিত মুনিয়া হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মিডিয়া সেলের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক।