ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ই নভেম্বর ২০২৪ , বাংলা - 

মুনিয়ার ভাইয়ের পর বোনের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার।।ঢাকাপ্রেস২৪.কম

2021-05-10, 12.00 AM
মুনিয়ার ভাইয়ের পর বোনের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন তার প্রেমিক বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর। প্রাথমিক তদন্ত ও পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণে এমনটাই বলছে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে আলোচিত এ মামলা থেকে আনভীরকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজকে নিজেদের পক্ষে নেয়া হয়েছে। এখন বড় বোন ও গুলশান থানার মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার সঙ্গে সমঝোতার অপকৌশল নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

হুইপপুত্র শারুনের ওপর দোষ চাপানোর পাশাপাশি নুসরাতের চরিত্রহনন, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা কল্প কাহিনী ছড়িয়ে দিয়ে চাপে রাখার পর গোপনে বড় কোনো প্রলোভন দেখানোর অপচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জাল ফেলে ভিকটিম মুনিয়ার বড় বোনের মুখ বন্ধ করতে আনভীর ও তার সহযোগীদের অব্যাহত দৌড়ঝাঁপ চলছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।
হধমধফ

চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বসুন্ধরার এমডি আনভীর ও মুনিয়ার পরকীয়ার কাহিনী ঘটনার শুরুতেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্বামী-স্ত্রীর মতো দীর্ঘদিন বসবাস করার পর বিয়ে করার বিষয়টি সামনে আসার পরই দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে আনভীর। নানা অপবাদ ও অজুহাত দেখিয়ে মুনিয়াকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হয়।

ফলে ওই তরুণী যদি আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে এর প্ররোচনা যে বসুন্ধরা এমডি দিয়েছে, সেটিও পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে। তবে মুনিয়ার মৃত্যু হত্যাকাণ্ডও হতে পারে, সেটি শতভাগ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তসহ ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ। সম্ভাব্য সবদিক মাথায় রেখেই আলোচিত এ মামলার তদন্ত চলছে।

অপর একটি সূত্র মতে, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সমঝোতার পথে হাঁটছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ইতোমধ্যে মুনিয়ার ভাইকে নিজেদের অনুকূলে এনে তাকে ব্যবহার করে উল্টো মামলা দায়েরের চেষ্টা করানো হয়েছে। সেই বড় ভাই সবুজ গত কয়েকদিন ধরে রহস্যজনক নিখোঁজ। তবে আনভীরকে রক্ষা করতে হলে মূলত মুনিয়ার বড় বোন নুসরাতের মুখ বন্ধ করতে হবে। সে লক্ষ্যে নানা অপকৌশল নেয়া হয়েছে। চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি গোপনে আঁতাত করার পথেও হাঁটছে বসুন্ধরা।

পুলিশ সূত্র জানায়, গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ হওয়া দুটি স্মার্টফোনে বসুন্ধরা এমডি আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার অসংখ্য ছবি রয়েছে। বেশ কয়েকটি ছবিতে মুনিয়া এবং আনভীরকে হাতে হাত রেখে এবং কিছু ছবিতে কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। মুনিয়ার ফোনে পাওয়া গেছে বাংলালিংক অপারেটরের একটি নম্বরের অসংখ্য কল রেকর্ড। ওই নম্বরটি এমডি আনভীরের বলে নিশ্চিত করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা। ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিলের কথোপকথনের সবগুলোতেই তাদের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ চলছিল।

এদিকে মুনিয়ার ফোনে ডাউনলোড করা একটি অ্যাপে মুনিয়া ও আনভীরের নম্বরে চ্যাটের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এই অ্যাপে দেখা যায়, মুনিয়া প্রতিদিনই আনভীরের নম্বরে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ এবং ছবি দিতেন। এসব মেসেজে ফ্ল্যাটে একা থাকা মুনিয়া কখন কী করতেন, সারাদিন কীভাবে কাটত, ফোনে সারাদিন কার সঙ্গে কী কথা হয়েছে ইত্যাদি লেখা রয়েছে।

একই সূত্র মতে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়াও মুনিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়ে তার সঙ্গে সায়েম সোবহান আনভীরের অবৈধ সম্পর্কের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। ঠিক কী কারণে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল এবং ভিকটিমকে মোবাইলে ফোনে খুদেবার্তার মাধ্যমে যে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল তাও তদন্তে উঠে এসেছে। এ ছাড়া মুনিয়ার ব্যবহৃত ছয়টি ডায়েরিতে আনভীরকে উদ্দেশ্য করে লেখা অভিমান ও হতাশার কথাগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা ফরেনসিক প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। স্পর্শকাতর মামলাটির নিবিড় তদন্ত চলছে। সন্দেহভাজন আসামিদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই গুলশানের ওই ভবনের কয়েকজনকে জেরা করেছে পুলিশ।

আত্মহত্যার ঘটনায় ‘প্ররোচনা’র অভিযোগে বসুন্ধরার এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত। এতে তিনি অভিযোগ করেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা।

নুসরাত পুলিশকে জানিয়েছে, এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত ১ মার্চ গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর।

১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতেন। ১ লাখ ১১ হাজার টাকার ওই অভিজাত ফ্ল্যাটের ভাড়া দিতেন আনভীর। গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।  সৌজন্য;দৈনিক মানব কন্ঠ ।